বাবার গাড়ি চালকের পরিকল্পনায় স্কুলছাত্রকে অপহরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪, ১৭:৩৮ | প্রকাশিত : ২৪ মার্চ ২০২৪, ১৫:৩৪

প্রতিদিন বাবার যে গাড়িতে করে যাতায়াত করত স্কুলছাত্র জামিনুর রহমান, সেই গাড়ির চালকের পরিকল্পনায় অপহরণের শিকার হতে হয়েছে তাকে। ঘটনার শিকার এই কিশোর রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা ব্যবসায়ী আনিসুর রহমানের গাড়ির চালক কামরুল হাসান। তিনিই এই ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী।

রবিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জামিনুর রহমানকে নিয়ে গত ২০ মার্চ সকালে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সামনে পৌঁছান কামরুল হাসান। সেখান থেকে সাতজন অপহরণকারী জামিনুরকে তুলে নিয়ে যায়। অপহরণের পর জামিনুর রহমানের পরিবারকে ফোন করে চক্রটি এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জামিনুর রহমানসহ গাড়ি চালক কামরুল হাসানকে ছাড়িয়ে আনা হয়। ভিকটিমের পরিবার তখনও জানতো না কামরুল হাসান অপহরণকারী দলের একজন সদস্য।

ভিকটিমের পরিবার জামিনুর ও গাড়ি চালককে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনার পর ধানমন্ডি থানায় ২০ মার্চ একটি মামলা করে। এরপর এ ঘটনায় ছায়াতদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগ। ছায়া তদন্তের একপর্যায়ে গাড়ি চালক কামরুল হাসানসহ সাতজনকে ২০ মার্চের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করে ডিবি রমনা বিভাগ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মাসুদ, নূর আলম, কামরুল হাসান, রনি মিয়া, মনির হোসেন, জনি বিশ্বাস ও আসলাম হাওলাদার। ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি প্রধান জানান, গ্রেপ্তার মাসুদ গাড়ি চালক কামরুল হাসানের দুলাভাই। তারা দুজন পরিকল্পনা করে জামিনুর রহমানকে অপহরণ করবে। দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে তারা এই অপহরণের ঘটনা ঘটায়।

হারুন অর রশীদ বলেন, মাস্টার মাইন্ড স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্র জামিনুর রহমান (১১) গত ২০ মার্চ সকালে গাড়ি চালক কামরুল হাসানসহ স্কুলে যাচ্ছিল। সকাল সাড়ে সাড়ে টায় তারা স্কুলের সামনে পৌঁছালে তিনজন অপহরণকারী গাড়ি সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। এরপর আরও চারজন অপহরণকারী গাড়ির সামনে আসে। এই সাতজন মিলে গাড়ি চালক কামরুল হাসানসহ জামিনুর রহমানকে অপহরণ করে সাভারের গেন্ডা এলাকায় চলে যায়। অপহরণটি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়। গাড়ি চালক কামরুল হাসান হলেন চক্রটির মূলহোতা মাসুদের শালা। কামরুল নিজেও এই চক্রের একজন সদস্য।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, অপহরণের পর চক্রটির একজন জামিনুর রহমানের বাবা আনিসুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণকারীরা ভিকটিমের বাবাকে আরও বলে যদি এ ঘটনা পুলিশ কিংবা কাউকে জানানো হয় তাহলে জামিনুর রহমানকে হত্যা করা হবে। এই হুমকি দেওয়ার কারণে ভিকটিমের বাবা ভয় পেয়ে মামলা করতে থানায় যায়নি। পরে ঘটনার দিন রাতে ভিকটিমের চাচা হাবিবুর রহমান ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পরেও ভিকটিমের বাবা পুলিশকে বলে ‘আপনারা জাইয়েন না, আপনারা গেলে তারা আমার ছেলেকে হত্যা করে ফেলবে।’

ডিবি প্রধান বলেন, ভিকটিমের বাবার কথা চিন্তা করে আর যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায় সেই চিন্তা করে আমরা প্রাথমিকভাবে যাইনি। পরে ঘটনার দিন রাত ১০টায় ভিকটিমের পরিবার অপহরণকারীদের ১৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে জামিনুর রহমান ও গাড়ি চালক কামরুল হাসনাকে ছাড়িয়ে আনে। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনলেও আমরা অপহরণকারীদের ছাড়ব না। এরপর ডিবি রমনা বিভাগ এ বিষয়ে কাজ শুরু করে। মুক্তিপণ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে গাড়িচালক কামরুল হাসানসহ অপহরণকারী চক্রের সাত জনকে ডিবি রমনা বিভাগ গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, এই অপহরণের মূলহোতা হলেন গাড়িচালক কামরুল হাসান ও আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মাসুদ। মাসুদের শালা হলো কামরুল হাসান। এরা দুজনে মিলেই জামিনুরকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। কামরুল হাসানসহ বাকি আসামিরা কারাগারে ছিল। তারা কারাগারে বসে পরিকল্পনা করে যে, কীভাবে বের হয়ে অপহরণ করা যায়। তখন কামরুল কারাগারে গিয়ে তারা দুলাভাইয়ের কাছে জামিনুরকে অপহরণের কথা বলে। কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে তারা জামিনুরকে অপহরণ করেন। চক্রটি একটি অপহরণ করে কারাগারে যায়, আবার কারাগার থেকে বের হয়ে অপহরণ করে।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন ধনী ব্যক্তির গাড়ি চালক হিসেবে নিজেদের লোককে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হয় এবং পরে অপহরণ করে। এছাড়া ধনী ব্যক্তিদের গাড়ি চালককে কৌশলে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে তথ্য সংগ্রহ করে অপহরণ করে। ভিকটিমের পরিবারের গাড়িচালক কামরুল নিজেই এই অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং তার সহযোগিতায় ও তার ভগ্নিপতি মামুনের পরিকল্পনায় এই ঘটনাটি সম্পন্ন হয়।

ডিবি প্রধান বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অপহরণের ঘটনায় আমরা দেখেছি এসব ঘটনায় গাড়ি চালকরা জড়িত থাকেন। মাস্টারমাইন্ডের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর অপহরণের ঘটনায় গাড়ির চালক কামরুল হাসান জড়িত।

গাড়িচালক ও বাসায় কাজের বুয়া নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে সবার প্রতি আহ্বান জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/এসএস/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :