ইতালি নেওয়ার প্রলোভনে লিবিয়ায় নিয়ে আটক, নির্যাতন করে বাড়িতে মুক্তিপণ দাবি

সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০২৪, ২৩:৩৭

অভাবের সংসারে একটু হাঁসি ফোটাতে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দালালের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে চার মাস আগে ইতালির উদ্দেশ্য রওয়ানা হন কলেজ শিক্ষার্থী শাকিল মিয়া (২৪)। কিন্তু দুর্ভাগ্য শাকিলের। ইতালি পৌঁছানোর আগে লিবিয়াতে দালাল চক্র তাকে আটকে রেখে আরও ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বসে। এ দাবিতে শাকিলের উপর নির্মম নির্যাতনও চালানো হচ্ছে। এ সংবাদ পেয়ে পরিবারে হাসি ফোটার বদলে বইছে কান্নার জোয়ার।

লিবিয়ায় ছেলের নির্মম নির্যাতনের খবরে তার মা রাবেয়া বেগমের কান্না কিছুতেই থামছে না।

শাকিল ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তুপুর গ্রামের দিনমজুর টিটুল মিয়ার একমাত্র ছেলে। তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে শাকিলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শাকিলের মা কাঁদতে কাঁদতে মাঝে মাঝে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। সন্তানের জীবন রক্ষায় আকুতি মিনতি করে বলছেন, কোথায় পাব এতো টাকা। কীভাবে বাঁচাবো আমার ছেলেকে। আমার একমাত্র আদরের সন্তানকে ফিরে পেতে সরকারের সহযোগিতা চাই।

শাকিলের বাবা টিটুল মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য মুকুল ঠাকুর কয়েক মাস আগে দেশে এসে আমার কলেজ পড়ুয়া সন্তান শাকিলসহ গ্রামের চার যুবককে ইতালিতে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মাথা খারাপ করে দেয়। যে কারণে পড়ালেখা বাদ দিয়ে আমার ছেলে শাকিল ইতালি যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। পরে বাধ্য হয়ে শাকিলকে বৈধভাবে ইতালি পাঠানোর জন্য মুকুলের সঙ্গে ১২ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হই। চুক্তি অনুযায়ী ধার করে ও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ১২ লাখ টাকা জোগাড় করে মুকুলকে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, একইভাবে আমাদের গ্রামের বাসার মোল্যা (১৭), হারুন ফকির (২৫) ও শান্ত ফকির (২৪) নামে তিন যুবককে ইতালি নেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নেন মুকুল। এরপর গত ৪ জানুয়ারি শাকিলসহ চার যুবককে প্রথমে ভারতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ৮ জানুয়ারি দুবাই নেওয়া হয়। গত ১৪ জানুয়ারি তারা লিবিয়ায় পৌঁছায়। কিন্তু লিবিয়ায় নেওয়ার পর গত ১৫ দিন ধরে আমার ছেলে শাকিলকে একটি রুমে আটক করে রেখে নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। আর আমাদের ফোন করে ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করছে। আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে টাকা না দিলে শাকিলকে মেরে ফেলা হবে বলে জানানো হচ্ছে।

স্থানীয় কাদের মাতব্বর বলেন, সোমবার সকালে দালাল মুকুলের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি দাবি করে জানিয়েছেন, শাকিলকে লিবিয়ায় মাফিয়ারা আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করছে। আমি শাকিলকে উদ্ধারে চেষ্টা করছি। তবে দালাল মুকুলের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তার একতলা ভবনের দরজায় তালা ঝুলতে দেখা গেছে।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, যাদের মাধ্যমে শাকিল অবৈধভাবে লিবিয়ায় গেছে, তাদের ধরতে ইতোমধ্যে সালথা থানা পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

শাকিলের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সালথার মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :