বাবা-ছেলের প্রতারণা, দেশে বসে তুর্কি সেনাবাহিনীতে চাকরি দিতেন তারা
তুরস্কে সেনাবাহিনীর অধীনে লোক নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তারা হলেন- কামরুল হাসান ও তার ছেলে ফাহাদ হাসান সিয়াম। তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড, প্যাড সিল, দুইটি কম্পিউটার, বিদেশে পাঠানোর জন্য ভুয়া নিয়োগপত্র ও ভিসা জব্দ কর হয়েছে।
শনিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
রবিবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে গ্রেপ্তারকৃত দুইজনের সঙ্গে পরিচয় হয় সুনামগঞ্জের ছাতকের বাসিন্দা সহিদুল ইসলামের। পরিচয়ের এক পর্যায়ে কামরুল হাসান সহিদুলকে প্রস্তাব দেন তুরস্কে সরকারিভাবে সেনাবাহিনীর অধীনে অনেক লোক নিয়োগ করা হবে, তাকে সেখানে তিনি পাঠাতে পারবেন। তুরস্কে গিয়ে তিনি এই চাকরি করে ভালো বেতন পাবেন। কামরুল হাসানের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান সহিদুল। তবে তুরস্কে যেতে সহিদুলকে সাত লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান কামরুল হাসান। প্রাথমিকভাবে কামরুল হাসান ও তার ছেলে সিয়ামকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন সহিদুল। চুক্তি মোতাবেক গত ৭ মে কামরুল হাসান ও তার ছেলেকে এই ২০ জন ২ লাখ ৩০ হাজার করে টাকা দেন। টাকা দেওয়ার পর তাদের মেডিকেল করানো হয়। মেডিকেল করানোর কিছু দিন পর কামরুল হাসান ও তার ছেলে এই ২০ জনকে তুরস্কে যাওয়ার ভুয়া জব অফার দেন।
তিনি বলেন, এর কিছুদিন পর কামরুল ও সিয়াম সহিদুলসহ বাকি ২০ জনকে বলেন এখন তুরস্কে পাঠানো যাবে না। তাই তাদের সবাইকে মালয়েশিয়া ও সার্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। এই কথা বলে কামরুল ও সিয়াম তাদের কাছ থেকে আরও ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাউকেই বিদেশ পাঠাতে পারেননি কামরুল ও সিয়াম। তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের ওয়ারীর অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যান তারা। মূলত ওয়ারীর অফিসেই টাকার লেনদেন হয় ভিকটিম ও কামরুলের মধ্যে। ভিকটিম সহিদুলের অভিযোগের ভিত্তিতে কামরুল ও সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যেভাবে প্রতারণা করতেন তারা:
ডিবি প্রধান বলেন, কামরুল ও তার ছেলে সিয়াম ভিকটিমদের কাছে বলত তারা ৪-৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠানের বৈধ লাইসেন্সধারী। প্রকৃতপক্ষে তার কোনো লাইসেন্স নাই। ভুয়া লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন তারা। এছাড়াও তিনি বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস ভাড়া নেন। এইসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সরকারিভাবে তুরস্ক, কানাডা, মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য টাকা ও পাসপোর্ট নেওয়ার পর কিছু কিছু পাসপোর্ট তিনি বিভিন্ন বৈধ এজেন্টদের কাছে জমা দেন ভিসা করার জন্য। এগুলো দেখিয়েই পরবর্তীতে অন্যদের কাছ থেকে আরও টাকা নেন। টাকা নেওয়ার পর সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এছাড়াও কেউ টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেন। একপর্যায়ে গোপনে তিনি তার অফিস পরিবর্তন করে ফেলেন।
প্রতারক হয়ে ওঠার গল্প:
কামরুল হাসান ১৯৯৮ সাল থেকে ১০ বছর মালয়েশিয়াতে কাটান। দেশে ফিরে ২০০১ সাল থেকে আল-রিফাত ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে চাকরি করেন। ২০২২ সালে এজেন্সিটির মালিক মারা যাওয়ার পর তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। এভাবে প্রতারণা করে তিনি তুরস্ক, কানাডা, সার্বিয়া, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে এই পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ জন বিদেশে যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং তাদেরকে মেডিকেল করানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এছাড়া ভিসা প্রসেসিংয়ের কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ লাখ থেকে শুরু করে ৩০-৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।
(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/এসএস/ইএস)
মন্তব্য করুন