রমজানের শিক্ষা কাজে লাগানো হোক সারা বছর

ইসলাম ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২২

ইবাদতের বসন্ত মাস রমজান বিদায় নিতে যাচ্ছে। রমজানের পর পরিবর্তিত জীবনে ফিরে যাওয়াই রমজানের দাবি। কারণ রোজা নিছকই উপবাস থাকা, পানাহার ও কামাচার বর্জনের নাম নয়। এর বিশেষ তাৎপর্য ও দর্শন রয়েছে। রয়েছে এর দৈহিক, আত্মিক, নৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উপকারিতা। রমজান মাসের ট্রেনিং ও প্রশিক্ষণ কাজে লাগাতে হয় সারা বছর। ইসলাম ধর্মের ইবাদতগুলো শুধু অনুষ্ঠানসর্বস্ব নয়। ইবাদত পালনের পাশাপাশি ইবাদতের মধ্যকার দর্শন ও অন্তর্নিহিত শিক্ষানুযায়ী জীবনযাপনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ইবাদত পালনের সার্থকতা।

রমজান মাস মুসলমানদের জীবনে পরিবর্তন আনার সুযোগ করে দেয়। পবিত্র রমজান মুসলমানদের জীবনে ইবাদতের সঙ্গে বিশেষ অন্তরঙ্গতা গড়ে তোলে। কুরআনের সঙ্গে ভালোবাসা স্থাপন করে। হালাল উপার্জনের প্রেরণা দেয় এবং পরিশ্রমের মানসিকতা তৈরি করে। মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয়।

রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, ত্যাগ ও সংযমের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা তথা খোদাভীতি অর্জন। রোজা অবস্থায় আমরা মিথ্যা কথা, গিবত, চোখলখুরি, মূর্খতা ও অসৎ কাজ থেকে বিরত ছিলাম। তেমনি রমজানের পরেও আমাদের সেগুলো বর্জন করে চলতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার এই পানাহার বর্জন করা বা রোজা রাখায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই (বুখারি : ১৯০৩)। অর্থাৎ, রোজা রেখে যেমন মিথ্যা কথা, অসৎ কাজ ও মূর্খতা পরিহার করতে হয়, তেমনি রমজানের পরেও এই চর্চা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।

রোজা মানুষকে অনাহারি অভুক্ত মানুষের কথা ভাবতে শেখায়। পৃথিবীর দেশে দেশে ক্ষুধা, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের প্রতিচ্ছবি রোজাদারের সামনে ভেসে ওঠে।

প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) মানুষকে আহার করানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। মন ভরে ইফতার বিতরণ করতে বলেছেন। রোজাদারকে ইফতার করানোর মধ্য দিয়ে রোজাদারের ভেতর মানুষকে আহার করানোর একটি মানসিকতা তৈরি হয়। অপরের পাশে দাঁড়ানোর এ মূল্যবান মানসিকতার মধ্য দিয়ে আভিজাত্যের একটা চর্চা নিজেদের জীবনে সৃষ্টি হয়। তাই বছরের বাকি দিনগুলোতেও সৃষ্টির প্রতি যথাযথ বদন্যতা প্রদর্শন করতে হবে।

রমজানে কর্মচারীদের কষ্টের বোঝা হালকা করার নির্দেশ এসেছে। শ্রমিকদের প্রতি দয়াপরবশ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইসলামে শ্রমিকের অধিকার অসামান্য। তার শ্রমমূল্য ও সামাজিক অধিকার ইসলামে সুন্দরতম উপায়ে সংরক্ষিত। মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করাও একটি ইবাদত। নবিজি (সা.) বলেছেন-‘তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম সে যার আচরণ ভালো, যার চরিত্র সুন্দর (বুখারি)।

মাহে রমজানে মুমিন বান্দাদের মধ্যে দান-খয়রাতের আগ্রহ বেড়ে যায়। এটিও আল্লাহর অনুগ্রহ। সম্পদের মালিক আল্লাহ। বান্দা নিছক আমানতদার। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সম্পদ ব্যয় করা মুমিনের প্রধান গুণ। ধনীর সম্পদে অভাবী ও বঞ্চিতদের প্রাপ্য রয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে কুরআন-হাদিসে। রমজানে মুমিন বান্দারা আল্লাহর এ বিশেষ হুকুম পালনে আরও আগ্রহী হয়, কারণ এ মাহে রমজানে অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি পুণ্য অর্জন হয়। এ কারণেই মাহে রমজানে সাদাকাতুল ফিতর ও জাকাত আদায় করা হয়। নবিজি (সা.) সব সময় দানের হাত সম্প্রসারিত রাখতেন। অতএব, রমজান শেষ হলেও এসব ইবাদত অব্যাহত রাখা উচিত।

রমজানে ইবাদত-বন্দেগিতে মুমিনের হৃদয়ে নবপ্রেরণার উদ্রেক ঘটে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন-‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার (সূরা বাকারা ১৮৩)। রমজান মাসে প্রত্যেক রোজাদার ব্যক্তিকে অবশ্যই তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করতে হয়। আল্লাহর ভয়ে সব ধরনের অন্যায়, অত্যাচার ও পাপাচার বর্জন করে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশানুযায়ী মানবজীবন পরিচালনা করার নামই হচ্ছে তাকওয়া। ইসলামে তাকওয়ার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান কোনো কাজ নেই। তাকওয়া মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

রমজান মাস চলে গেলে অধিকাংশ মানুষ গুনাহর কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচতে হবে। তাছাড়া নামাজ রোজার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। এটি প্রতিদিনের আমল। ঈমান ও ইসলামের নিদর্শন। যে মুমিন অন্তত এটুকু চিন্তা করবে যে নামাজের মাধ্যমে মাটি দ্বারা সৃজিত এই দুর্বল মানুষ তার সৃষ্টিকর্তা ও মালিকের দরবারে হাজিরা দিতে পারছে, তার প্রিয় প্রেমাস্পদ রহমান ও রহিমের সঙ্গে কথোপকথনে সক্ষম হচ্ছে, তার পক্ষে নামাজের ব্যাপারে কোনো শিথিলতা প্রদর্শন করা সম্ভব হবে না, বরং অতি দুর্লভ অথচ সহজপ্রাপ্তি ভেবে মনে-প্রাণে নামাজের ব্যাপারে যত্নশীল হবে।

মাহে রমজান ও রোজা মুসলিম উম্মাহকে যে প্রশিক্ষণ দেয়, তা পরবর্তী জীবনের সবক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হওয়াই এর প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। অতএব, মাহে রমজানের এ বিদায়ক্ষণে আমাদের এ চিন্তা করা উচিত যে-এ পবিত্র মাহে রমজান আমাদের যে শিক্ষা ও চারিত্রিক প্রশিক্ষণ দিয়ে গেল, তা আমরা আমাদের বাস্তব জীবনের বাকি এগারো মাসে কীভাবে প্রয়োগ করতে পারি, কাজে লাগাতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সারাটা বছর রমজানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।

(ঢাকাটাইমস/৮ এপ্রিল/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :