রং মাখানো তুলি কাগজ ছুঁলেই হয়ে উঠছে একেকটা তিমিরবিনাশি গল্প

ঈদের আনন্দ শেষ হতে না হতেই দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির আরেক উৎসব পহেলা বৈশাখ। রং, কাগজ, আঠা গন্ধে ভরে গেছে চারুকলার আশপাশের বাতাস। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চারুকলার শিক্ষার্থীদের রংতুলির কারুকাজ। রং মাখানো তুলি কাগজ ছুঁলেই যেন হয়ে উঠছে একেকটা তিমিরবিনাশি গল্প।
অর্পিতা হালদার রিয়া চারুকলার ৩০ ব্যাচের ছাত্রী। কাজের মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পান তিনি। তাই ঈদের ছুটিকে কাজে লাগাতে চারুকলার নীচতলার এক্সিবিশন রুমে আনমনে কাজ করে যাচ্ছেন। তার রং মাখানো তুলি কাগজে ছোঁয়ালেই ফুঠে উঠছে যেন তিমিরবিনাশী একেকটি গল্প।
ঐশিক অদ্রি ৩০তম ব্যাচের ছাত্র। গ্রামের বাড়ি বরিশাল। সপরিবারে থাকেন ঢাকায়। তিনি বলেন, “আমরা যারা চারুকলায় পড়াশোনা করছি, আমাদের কাছে সারাবছরের এই একটি দিন থাকে আকাঙ্খিত। আর এবার তো ঈদ আর পহেলা বৈশাখ পেয়ে গেছি। আমরা তাই ভীষণ খুশি। চারুকলার সবার উদ্দীপনা এখন পহেলা বৈশাখ। সবাই একঙ্গেই আছি।”
তিনি জানান, ইতোমধ্যেই তৈরি গন্ধগোকূল, টেপা পুতুল, হাতি, পাখি, চাক্কা ফুল।
মো. মিঠু বেপারি (২৬)। বাঁশ, বেত দিয়ে কুটির শিল্পের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন। এটাই তাদের পেশা। তার দম ফেলার বা কথা বলার সময় নেই। সময় মাত্র দুদিন। এর আগেই এগুলো তুলে দিতে হবে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য। সুষ্ঠু সুশৃঙ্খলভাবে তৈরি করে দেওয়াই মূল লক্ষ্য।
এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার দায়িত্ব পেয়েছে চারুকলার ২৫তম ব্যাচ। ঐতিহ্যের উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকা টাইমসের কথা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার আহ্বায়ক সাদিত সাদমান রাহাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, “প্রস্তুতি প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমরা তো তিমিরবিনাশিনী’। আর এবারও বাংলার ঐতিহ্য চিরচেনা সংস্কৃতি সবকিছু নিয়েই তৈরি করা হয়েছে টেপা পুতুল বনরুই, হাতিসহ অনেক কিছু।”
চারুকলার অফিস সহায়ক নন্দিতা রানী ঘোষ। ১৪ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের আষ্টেপৃষ্ঠে রয়েছেন। প্রতিবছর একটি করে ব্যাচ বের হয়। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে সবাই মাস খানেক আগে থেকে আসা শুরু করেন। মঙ্গল শোভাযাত্রা পর্যন্ত নতুন পুরোনোর এই যে মিলনমেলা, এই তো পহেলা বৈশাখ। এবার ১১ দিনের ছুটি থাকলেও তিনি রয়েছেন ঢাকায়। এবার ঈদ আর পহেলা বৈশাক একসঙ্গে হওয়ায় পরিবার ছেড়ে থাকতে কষ্ট হলেও চারুকলাও একটা পরিবার, তাই কষ্টটা মেনে নিয়ে আনন্দেই কাজ করছেন তিনি।
এদিকে যেহেতু সারারাত জেগে কাজ করছেন সবাই, তাই মেয়েদের জন্য ছাত্রী মিলনায়তনটি কর্তৃপক্ষ খোলা রেখেছেন। আর তাদের দেখভাল করতে নন্দিতা যেন এক নিবেদিত প্রাণ।
এবারের মঙ্গলবার শোভাযাত্রার আয়োজক চারুকলার ২৫তম ব্যাচ। ১৩৫ জনের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও পুরাতন ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন যুক্ত।
(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/এএম/এফএ)

মন্তব্য করুন