সাজা নিয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন যুবলীগ নেতা

সাভারের আশুলিয়ার যুবলীগ নেতা কবির হোসেন সরকার। একাধিক মামলার আসামি তিনি। আদালতের রায়ে হয়েছেন সাজাপ্রাপ্ত। একটি মামলায় আছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। অথচ গত ৭ বছর ধরে থানা যুবলীগের শীর্ষ পদে বহাল তবিয়তে আছেন। পেয়েছেন জেলা কমিটির পদও।
অভিযোগ আছে একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। তাকে নিয়ে দলের ভেতরেও রয়েছে নানান সমালোচনা। তিনি বর্তমানে আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক। সম্প্রতি পদায়িত হয়েছেন ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে।
বিএনপি-জামায়াতের দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি ও ভাঙচুরের অপরাধে ঢাকার রমনা থানায় ২০১১ সালে দায়ের করা মামলাতে কবির হোসেন সরকারকে আসামি করা হয়। শুনানি শেষে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর আদালত তাকে ওই মামলার দুটি ধারায় প্রতিটিতে পৃথকভাবে এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডসহ এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি গ্রেপ্তার হচ্ছেন না। প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৯ এপ্রিল ঢাকার কাকরাইল এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিয়ে সড়কে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, যাত্রীদের মারধরসহ চালকের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় রমনা মডেল থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাফর আলী ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত ওই মামলায় বেশ কয়েকজন আসামির সঙ্গে কবির হোসেন সরকারকেও দোষী সাব্যস্ত করেন এবং ১৪৭ ধারায় এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। অপর আরেকটি মামলায় এবং ৪২৭ ধারায় আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। দুটি ধারায় দেওয়া সাজা আলাদাভাবে কার্যকর করা হবে বলে জানিয়ে দেন আদালত।
রমনা থানার এই মামলা ছাড়াও কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় আরও ৫টি মামলা রয়েছে। এ মামলাগুলো দায়ের হয় ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর, ২০১০ সালের ৩ এপ্রিল, ২০১৪ সালের ২৫ মে, ২০১৩ সালের ২০ জুলাই, ২০০৯ সালের ২১ জুলাই। এসব মামলায় হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, চুরি, প্রতারণা, দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
আশুলিয়া যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মী দাবি করে বলেন, কবির সরকারকে আগে ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এবং তার আপন বড়ভাই গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি। কবির সরকারের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে আর এসব মামলা থেকে বাঁচতেই তিনি যুবলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই গঠিত আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়কের পদ পান তিনি। যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে তিনি এ পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিন মাস মেয়াদি সেই কমিটি বর্তমানে ৭ বছরে পড়েছে। আর সেই কমিটির আহ্বায়ক পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা কবির হোসেন সরকারের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই বিএনপির রাজনীতি করিনি। যারা এসব বলে তারা মিথ্যে বলে। আর মামলাগুলোও মিথ্যে, কারণ আমি আশুলিয়ার বাসিন্দা, রমনা এলাকার ঘটনায় আমি কীভাবে থাকব। সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে আমার কিছু ঝামেলা ছিল, উনিই আমাকে ওই মামলায় জড়িয়েছেন। আমি ওই মামলায় জামিন নিয়েছি, জামিনের কাগজ থানায় জমা দিয়ে দিবো। আর আশুলিয়া থানার দায়ের হওয়া মামলার বেশিরভাগই নিষ্পত্তি হয়েছে। কিছু মামলায় জামিনে রয়েছি।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেয়েছি। তিনি জামিনের কোনো কাগজ থানায় জমা দেননি। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
(ঢাকাটাইমস/০৩জুন/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন