সুনামগঞ্জে তৃতীয় দফায় বন্যা আতঙ্ক, ১০ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে আবারও সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমাসহ সকল নদ নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।
শুক্রবার সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কে যানবাহন চলাচল। নৌকা দিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদের।
এছাড়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোও পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া গেলো ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫৫ মিলিমিটার আর চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত ১৬০ মিলিমিটার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬ জুন পাহাড়ি ঢল এবং টানা বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় বন্যা কবলিত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পানিবন্দি হয়েছিল ৭ লাখ মানুষ। পরে সব নদ-নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও গত ৩০ জুন থেকে আবারও টানা বর্ষণে বন্যার কবলে পড়ে জেলার ৫টি উপজেলার ৫ লাখ মানুষ। ৯ জুলাই পানি কমে নদীর মাত্র ৪৪ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছিল। কিন্তু দুই দেশে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে আবারও নদ নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।
তাহিরপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নে সূর্যেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মোজাহিদ মিয়া জানান, পানি বাড়লেই বাড়িতে পানি ঢুকে যায়। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। কিছুদিন পূর্বে দুই বারের বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে থাকতে হয়েছে। এক মাসেই তিন বার পানি ও মাটিয়ান হাওরের ঢেউয়ে আমার ঘরের অবস্থা শেষ। কোনো সহযোগিতাও পাই না। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর পাড়ের বাসিন্দা জহির মিয়া জানান, পানি কমায় মন ভালো হয়েছিল। কিন্তু গত তিন দিন ধরে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে পানিও বাড়ছে। পানি বাড়লে আমরা বড় বেশি সমস্যায় পড়ে যাই। হাওরের ঢেউয়ে বসত বাড়ি ভাঙা শুরু হয়। আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হয়।
তাহিরপুর উপজেলার তাহিরপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সেলিম আখঞ্জি জানান, ভারত থেকে আবারও পানি নেমে আসায় সুনামগঞ্জ জেলার সঙ্গে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ভারতে ও সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে আবারও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/পিএস)

মন্তব্য করুন