নায়িকার গাড়িচালক থেকে প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন, বিপুল সম্পত্তির মালিক বনে জাহাঙ্গীর চেয়েছেন সাংসদ হতে

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলাপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামের রহমত উল্ল্যাহ ও আজিজা বেগম দম্পতির ৫ ছেলে এবং ২ মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম। ১৯৮৪/১৯৮৫ সালের দিকে তৎকালীন বাংলাদেশের চলচিত্রের অভিনেত্রী দোয়েলের গাড়িচালক ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তার মামা আবুল কাশেম তাকে বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসা দেখভালের জন্য রেখে আসেন।
এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা আহত হওয়ার পর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়াসহ সুস্থ হওয়ার সময় দেখাশুনা করেন জাহাঙ্গীর আলম।
প্রধানমন্ত্রীর বাসায় কাজ করতেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে নিজেকে বিভিন্ন জায়গায় ও সর্বমহলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর যে কয়জন এপিএস ছিলো তাদের নামের তালিকায় ছিলো না জাহাঙ্গীর আলমের নাম।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিমাসে নিজ গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে আসতেন জাহাঙ্গীর আলম। এলাকায় ব্যপক উন্নয়নমূলক কাজও করেছেন। স্বপ্ন ছিলো নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনে সাংসদ নির্বাচন করা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যপক দোড়ঝাঁপ দিলেও পরবর্তীতে আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ক্রয় করেছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিয়ে মানুষকে হয়রানির অভিযোগ আনলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠির মাধ্যমে জাহাঙ্গীর এপিএস নন বলে গণমাধ্যমকে জানানো হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চাপে পড়ে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ্রগহণ করেন।
সবশেষ গত রবিবার (২৪ জুলাই) বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এমন উদাহরণ দিতে গিয়ে নিজ বাসার সাবেক এক পিয়নের দুর্নীতি সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। তিনি বলেন, আমার বাসার সাবেক এক পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক।
অভিযোগ রয়েছে, গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম অনেক সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। নিজের আবার ব্যক্তিগত সহকারী রেখেছেন। জাহাঙ্গীর আলমের নাম-ভাঙিয়ে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন তার ভাগিনাসহ বেশ কয়েকজন। তবে এসব বিষয়ে তথ্য দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের নিজেদের পরিচয় দিতে নারাজ স্থানীয় লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, নিজ গ্রামের বাড়ি নাহারখিল গ্রামে গড়ে তুলেছেন ৪ তলা একটি আলিশন বাড়ি, জেলা শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুরে ৮তলা একটি বাড়ি, চাটখিল, খিলপাড়া বাজার, ঢাকার ধানমন্ডিতে প্লট ও সম্পত্তি।
সরজমিনে খিলপাড়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ৪ তলা বাড়িতে শুধুমাত্র তাঁর বড় ভাই মীর হোসেন ও তার বড় ভাবী রয়েছেন।
তাঁর বড় ভাই মীর হোসেনের দাবি, জাহাঙ্গীরের ব্যাংকে লোন ছিলো। বিভিন্ন নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অনুদান এনে তিনি এলাকার লোকজনকে দিতেন। তিনি বলেন, আমার ভাই এতো টাকার মালিক এটা আমার জানা ছিলো না।
তিনি জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোতে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলেও দাবি করেন।
ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/ইএস

মন্তব্য করুন