সোনারগাঁওয়ের ডিসি গার্ডেন: দিনের বেলায় ভুতুড়ে বাড়ি, রাতে মাদকসেবীদের আখড়া

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী। বর্তমানে এটি একটি উপজেলা। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শনসহ মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এ স্থানটির গুরুত্ব বিবেচনায় এবং প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ২০১৬ সালে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে এখানে নির্মাণ করা হয় ‘ডিসি গার্ডেন’ নামে একটি রেস্ট হাউস। তবে নির্মাণের পর থেকে একদিনও ব্যবহৃত হয়নি এটি। বর্তমানে এটিকে দেখতে ভুতুড়ে বাড়ি মনে হয়। আর রাতের বেলায় এটি পরিণত হয় মাদকসেবীদের আখড়ায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা শিল্প নগরীর গঙ্গানগর এলাকার চর রমজানে এক একর ৭৭ শতাংশ খাস জমিতে ২০১৬ সালে ডিসি গার্ডেন নামক রেস্ট হাউসটির উদ্বোধন করা হয়। ওই সময়ের জেলা প্রশাসক মো. আনিছুর রহমান মিঞা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসের ভূঁইয়ার তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। তবে স্থানীয় প্রশাসন জানেন না এ রেস্ট হাউসের নিরাপত্তার দায়িত্বে কে ছিলেন বা আছেন।
নামে ‘ডিসি গার্ডেন’ হলেও বাস্তব চিত্র কিন্তু উল্টো। এটি এখন ভুতুড়ে জঙ্গলবাড়িতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিন, বালুচরের চারদিকে ঝোপ-ঝাড় বেষ্টিত তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি পরিত্যক্ত বাড়ির দেখা মিলল। বাড়ির ভেতরে চষে বেড়াচ্ছে গরু। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় ইতোমধ্যে চুরি হয়ে গেছ বাড়িটির দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন মালামাল। এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। শৌচাগার ও রান্নাঘর থেকে শুরু করে প্রতিটি কক্ষই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইট, বালি, সুরকি। মেঝেতে পড়ে আছে মাদকসেবীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র।
স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, এটিই হলো ‘ডিসি গার্ডেন’ রেস্ট হাউস। নির্মাণের পর এখানে একদিনের জন্যেও কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে আসতে কিংবা থাকতে দেখা যায়নি। উপজেলা সংলগ্ন অনেক সরকারি খাস জমি ছিল। কিন্তু রেস্ট হাউসটি সেখানে না করে কি উদ্দেশ্যে এখানে করেছে তা বলতে পারছে না স্থানীয়দের কেউ।
তারা জানান, জনবিচ্ছিন্ন স্থানে রেস্ট হাউসটি নির্মাণ করায় এখানে সংগঠিত হচ্ছে অসামাজিক কার্যকলাপ। সন্ধ্যা নেমে এলেই বাড়িটি পরিণত হয় মাদকসেবীদের আখড়ায়।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, এটা স্থানীয় তহশিলদারের তত্ত্বাবধানে থাকার কথা। আমি এখানে যোগদানের পূর্বেই এ রেস্ট হাউসের অধিকাংশ জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। রেস্ট হাউসের নিরাপত্তার দায়িত্বে কে ছিলেন? চুরির ঘটনায় কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি

মন্তব্য করুন