শিক্ষায় ক্ষতি অপূরণীয়, জোর দেওয়া হচ্ছে প্রাথমিকের মানোন্নয়নে
প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়াজ উঠেছে রাষ্ট্র সংস্কারের। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় ধরে চলে আসা ঘুণে ধরা ও অসংগতিপূর্ণ সব নিয়ম নীতিতে পরিবর্তন ঘটেতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। আলোচনা চলছে বিগত সরকারের প্রণীত শিক্ষা কারিকুলাম পরিবতর্নের বিষয়েও, যেটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছিল শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই। অভিভাবকরা কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না নতুন এই শিক্ষা কারিকুলাম।
সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সৃষ্ট অচলাবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। দেশের এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছিল। অস্থিরতা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করলেও পরীক্ষা শুরুর ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খোলা হয়নি কোনো ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও।
এমন অবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বন্ধ হওয়া প্রথমিক বিদ্যালয় বুধবার থেকে খুলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এরইমধ্যে দেশের প্রাথমিক পর্যায়ের নতুন কারিকুলাম বাতিলের দাবি উঠেছে অভিভাবকদের তরফে। সম্প্রতি প্রাথমিকের কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে তারা মানববন্ধনও করেছেন। সেখানে অভিভাবকরা শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার দাবি করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার কারিকুলাম বাতিল করে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার মতো একটি বিজ্ঞানভিত্তিক যুগোপযোগী কারিকুলাম জাতিকে উপহার দেবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন।
তবে অভিভাবকদের দাবী অনুযায়ী এখনো নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড—এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম।
এনসিটিবি বলেন, ‘কারিকুলাম বাতিল কিংবা এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আমরা একা নিতে পারি না। সরকারের সিদ্ধান্তে এই কারিকুলাম গ্রহণ করা হয়েছে, এখন এটি বাতিল করতে হলে সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
বিধান রঞ্জন বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার মানের উন্নয়ন করা। যেন শিশুরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে এবং অবদান রাখতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষা একটি দেশের জন্য একদম ভিতস্বরূপ। কারণ, প্রথম জীবনে যা পড়ে, সেটি কিন্তু ব্যক্তিত্বের ভিত গড়ে দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো যেমনটা করা উচিত, তা করা হয় না। সুতরাং এ মুহূর্তে যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন করা।’
২০২২ সাল থেকে সব শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু হয়। এতে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ধরা হয় ৬০ শতাংশ। আর সামষ্টিক মূল্যায়ন অর্থাৎ পরীক্ষা হবে ৪০ শতাংশ। এছাড়া শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্পকলায় শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হওয়ার কথা।
আর ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন বা বছর শেষে পরীক্ষায় থাকবে ৪০ শতাংশ। বাকি বিষয় জীবন ও জীবিকা, তথ্যপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।
শিক্ষার্থীদের নবম ও দশম শ্রেণিতে অভিন্ন সিলেবাসে পড়ানো হবে। এর মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৫০ শতাংশ।
বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য- এই তিন বিভাগে ভাগ হবে। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিভাগ বেছে নেবে।
(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/টিটি/এসআইএস)