শেরপুরে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম, ক্ষতিগ্রস্ত লাখো মানুষ

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১:০৯| আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১:১০
অ- অ+

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নতুন করে সদর ও নকলা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

এতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীসহ জেলায় আমন ধান-সবজি আবাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ভেসে গেছে আড়াই হাজারেরও বেশি পুকুর ও মৎস্য খামার। এতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেবেন তা নিয়ে কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ ভুক্তভোগীদের।

কৃষি বিভাগ বলছে, পানি পুরোপুরি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হবে।

এদিকে রবিবার এবং গত তিনদিনে বন্যার পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ জনে। এরমধ্যে নালিতাবাড়ীতে দুই সহোদর ভাইসহ পাঁচজন ও ঝিনাইগাতীতে একজন পানিতে ডুবে এবং নকলায় প্লাবিত এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক কৃষক মারা গেছেন।

জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের পানি কিছুটা নেমে গেলেও সদর ও নকলা উপজেলাসহ নিম্নাঞ্চলের অন্তত তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন আবাদ, মাছের ঘের ও সবজি আবাদ।

এদিকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলায় বৃদ্ধ-নারীসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলাসহ জেলার অন্তত ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে।

এছাড়া এক হাজার হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মাছের ঘের তলিয়ে গেছে আড়াই হাজারেরও বেশি। এতে মাথায় হাত পড়েছে আমন ও মৎস্যচাষীদের। জেলার অন্তত দুই লাখ কৃষক এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

নালিতাবাড়ী শহরের কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী শওকত ওসমান বলেন, উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বাঁধ ভেঙে ও নদীর পাড় উপচে পানি যাওয়ায় রামচন্দ্রকুড়া, কাকরকান্দি, নন্নী, পোড়াগাঁও, নয়াবিল, বাঘবেড়, কলসপাড়, মরিচপুরান, যোগানিয়া, রাজনগরসহ ১০টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ওইসব এলাকার মানুষজন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলাজুড়ে নানা ধরনের ফসল ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, পাহাড়ি ঢলে তিন উপজেলার আমন ধান ও সবজি আবাদ নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি কমবেশি নির্ভর করবে পানি নেমে যাওয়ার ওপর। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে। তখন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হবে।

এদিকে জেলার বন্যাকবলিত এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বন্যাকবলিত বেশ কিছু এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রাতভর পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে।

ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর ভেঙে যাওয়া বাধ পরিদর্শন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘মহারশি নদীর বাঁধ উঁচু করার সুযোগ নেই। তবে ভাঙনকবলিত স্থান দ্রুত মেরামত করে দেওয়া হবে।’

রবিবার বিকালে বন্যা পরিস্থিতি ও সরকারি ত্রাণ বিতরণ সর্ম্পকে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘অবিরাম বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে মানুষজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তিনটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করছে।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমাদের সংগ্রহে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে। আরও ২৫ হাজার প্যাকেট ত্রাণের চাহিদা দেওয়া রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পরবর্তীতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভেষজ মহৌষধ আনারস কিডনির পাথর দূর করতে সিদ্ধহস্ত, ওজনও কমায় দ্রুত
খিলক্ষেতে কাভার্ডভ্যান চাপায় ২ পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিহত
পরীক্ষায় নকলের শাস্তি চার বছরের নিষেধাজ্ঞা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
টেক্সাসে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩, নিখোঁজদের সন্ধান চলছে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা