মঠবাড়িয়ায় প্রভাবশালীদের দখলে খাল, শত শত স্থাপনায় রুদ্ধ পানিপ্রবাহ
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় দীর্ঘ বছর ধরে প্রভাবশালীদের দখলে খাল ও বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি। এতে খাল সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। শত শত অবৈধ স্থাপনার কারণে রুদ্ধ হচ্ছে পানিপ্রবাহ। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। উপজেলা প্রশাসন বারবার অবৈধ উচ্ছেদ পরিচালনার উদ্যোগ নিলেও প্রভাবশালীরা মামলা করে তা থামিয়ে দেন।
এদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে বিক্ষুব্ধ কৃষক ও জনতা পৌর শহরের দক্ষিণ বন্দর স্লুইজগেট ও বেতমোর ইউনিয়নের কালিরহাট বাজারসংলগ্ন বাধ কেটে দেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা মঠবাড়িয়ার বহেরাতলা, দক্ষিণ বন্দর স্লুইজগেট, পিয়াজ হাটা, হাসপাতালের সামনের খালে এক কিলোমিটার, দক্ষিণ বন্দর স্লুইজগেট-আন্দারমানিক দেড় কিলোমিটার, মঠবাড়িয়া-গুলিশাখালী, মঠবাড়িয়া-সাপলেজা সড়কের খালের পাড়ে শতাধিক পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলার সাপলেজা বাজারের পশ্চিম অংশে আলিশ্যার মোড় এলাকায় খাল দখল করে শতাধিক পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে সাপলেজা ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারে, মিরুখালী, বড়মাছুয়া, তুষখালী ইউনিয়নের জানখালী বাজার, গুদিঘাটা বাজার, হলতা গুলিশাখালী, আলগী পাতাকাটা বাজারসহ উপজেলা বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালীরা খালের পাড় দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িসহ নানা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন এবং এখনো নির্মাণ হচ্ছে। প্রভাবশালীরা যেন দখলের প্রতিযোগিতায় মেতেছেন।
অপরদিকে খালের দুই তীরের জনবসতির ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্যসহ অসংখ্য বাসাবাড়ির শৌচাগারের পাইপ সংযোগ থাকায় খালের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে।
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলী হায়দার বলেন, ‘বহেরাতলা তিন খালের মোহনা ভূমিদস্যুরা যেভাবে ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে, মনে হচ্ছে এটা এদের বাপদাদার সম্পত্তি। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। না হলে অদূর ভবিষ্যতে এখানে খাল বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।’
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও কলামিস্ট নূর হোসাইন মোল্লা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালতেরও উচিত বাদীর বক্তব্য শুনেই নিষেধাজ্ঞা না দেয়া। আদালতের প্রতি অনুরোধ, তদন্ত সাপেক্ষে যেন বাদীর আবেদন মঞ্জুর করেন।’
খাল বেদখল হয়ে যাওয়ায় পানির অভাবে প্রয়োজনের সময় ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে।
মঠবাড়িয়া ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা মো. সোহেল আহম্মেদ বলেন, ‘অবৈধ দখলদারদের কারণে পানি সরবরাহ করতে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। কোথাও আগুন লাগলে পানি সংগ্রহে দেরি হওয়ার কারণে অনেক সময় অনাকাঙ্খিত ক্ষতি হয়ে যায়।’
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আবদুল কাইয়ূম প্রভাবশালীদের কিছু মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করলে দখলদাররা কিছু দিনের সময় নিয়েছে। তবে আমাদের উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান থাকবে।’
(ঢাকাটাইমস/৬ডিসেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন