আদানির প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি এক তৃতীয়াংশ কমেছে

ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি পাওয়ার থেকে নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমেছে।
মঙ্গলবার ভারতের সরকারি এক পরিসংখ্যানের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বকেয়া নিয়ে বিরোধের কারণে গত মাসে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডের এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন গড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে সরবরাহ কমিয়ে দেয় আদানি। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ২০১৭ সালে ২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল কোম্পানিটি।
আদানির এই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ রপ্তানি করা হয়, তা দেশটির মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৯ শতাংশ। তবে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি আদানিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ মূল্য পুনর্বিবেচনা করতে বলছে বাংলাদেশ। দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা অন্যান্য সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাঝে আদানির বিদ্যুতের দাম সর্বোচ্চ।
গত আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের আগের ১২ মাসে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় ৯ শতাংশ সরবরাহ করেছে আদানি পাওয়ারের গড্ডা প্ল্যান্ট। চুক্তি অনুযায়ী, গড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি আঞ্চলিক বিদ্যুৎ কমিটির তথ্যে দেখা গেছে, গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে ৪৫০ মিলিয়ন কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ রপ্তানি করেছে গড্ডা প্ল্যান্ট। যা বার্ষিক হিসেবের তুলনায় ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ কম।
ভারতের ইস্টার্ন রিজিওনাল পাওয়ার কমিটির তথ্য অনুযায়ী, আদানি প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানির মাসিক হিসেবে এটিই সবচেয়ে বড় পতন। গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে আদানির কাছ থেকে বাংলাদেশের মাসিক বিদ্যুৎ আমদানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল।
শীতের মৌসুম শুরু হওয়ায় বাংলাদেশে বিদ্যুতের ব্যবহার ও চাহিদা কম থাকলেও বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আদানির কাছ থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের বার্ষিক চাহিদা মেটাতে জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের ব্যবহার গত নভেম্বরে ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। টানা ২১ মাস ধরে হ্রাস পাওয়ার পর পরপর তিন মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি ঘটেছে।
বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড অপারেটরের তথ্য অনুযায়ী, টানা পাঁচ মাস পতনের পর গত নভেম্বরে প্রাকৃতিক গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে, কয়লা-চালিত বিদ্যুতের উৎপাদন টানা তৃতীয় মাসের মতো হ্রাস পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় আদানির ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে।
তবে স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি দামে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে। ২০১৭ সালে ওই চুক্তি করার ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করা হয়েছিল কি না তা নিয়েও অভিযোগ কম নয়।
(ঢাকাটাইমস/১৭ডিসেম্বর/এমআর)

মন্তব্য করুন