অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই কাল হলো
থানায় অভিযোগ দেওয়ায় নৃশংসভাবে কোপালো দুর্বৃত্তরা
’হ্যান্ডকাফ’ পরা অবস্থায় স্লোগান দেওয়া সেই ছাত্রদলকর্মী মৃত্যুশয্যায়

নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে বসতবাড়িতে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে থানা পুলিশে অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কাজী মেহেদি হাসান নামের এক ছাত্রদলকর্মীকে বেদম মারধর ও কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, আহত মেহেদি মুড়াপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী এবং রূপগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি কাজী শাহ আলম কনকের ছেলে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন চলাকালীন বিগত সরকারের বিপক্ষে কাজ করায় ভুলতা কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ সময় হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় ‘দালালি না সংগ্রাম, ক্ষমতা না জনতা, চলছে লড়াই চলবে’ স্লোগানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দীপু ভূইয়ার অনুসারীরা নৃশংস এ ঘটনা ঘটিয়েছে। রাজনৈতিক মত পার্থক্যের কারণে চলতি মাসেই তাদের বাড়িতে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সভাপতি দুলাল, মুড়াপাড়া ১নং ওয়ার্ড বিএনপির মনির হোসেন, কামাল মিয়ার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় লিখির অভিযোগ দেওয়ার কারণেই মেহেদিকে মেরে ফেলতে চায় তারা।
ভুক্তভোগী মেহেদীর বাবা কাজী শাহ আলম কনক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সরকারি জমি থেকে মাটি কাটা, মাদকের কারবার ও নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করায় আমি যাকে রাজনীতি এনেছি সেই দুলাল আওয়ামী লীগের লোকজন এনে সম্প্রতি আমাদের বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনায় আমার ছেলে মেহেদি রূপগঞ্জ থানা ও সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েছিল। অভিযোগের বিষয় জানতে পেরে অভিযুক্তরা আমার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করছিল। যার কারণে বেশ কয়েকদিন রুপগঞ্জের বাইরে গিয়ে ছিল। তবে গত সোমবার সে বাড়িতে আসার পরই অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতে এসে পাশের নির্জন জায়গায় ধরে নিয়ে যায় এবং দফায় দফায় বর্বর নির্যাতন ও কোপায়। এসময় তাদের চাপাতির আঘাতে মেহেদির শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়। এক পর্যায়ে মেহেদির শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
কথা বলার এক পর্যায়ে কান্না করতে করতে মেহেদির বাবা আরও বলেন, ‘প্রশাসন আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে আজ আমার ছেলের অবস্থা হতো না। হাসপাতালের বিছানায় সন্তানের এ করুণ অবস্থা যেন আর কোনো বাবার দেখতে না হয়।’
এ ঘটনায় সবার কাছে মেহেদির জন্য দোয়া ও জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে যে অভিযোগ দিয়েছিল, সেখানে অনেক বেশি লোককে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, যার কারণে একজন পুলিশ সদস্যকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রকৃত অপরাধী খুঁজে বের করতে বলেছিলাম। কিন্তু এরমধ্যেই মেহেদির ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহতের পরিবারের কেউ এখনও থানায় আসেনি। থানায় আসলে মামলা হবে।’
তিনি আরও বলেন, মেহেদির ওপর হামলার পর ঘটনাস্থলে তদন্তকারী পুলিশ সদস্য গিয়েছিল। এ ঘটনায় মেহেদি আগে যাদের নামে অভিযোগ দিয়েছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ উপস্থিত ছিল, এর বাইরেও কিছু ছিল। ঘটনায় পর তারা সবাই পালিয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
রাজধানীর সুপারম্যাক্স হেলথকেয়ার লিমিটেডের পরিচালক মসলেহ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন মেহেদি। তিনজন সার্জনের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। তবে এখনও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।
(ঢাকাটাইমস/২১মে/এলএম/এমআর)

মন্তব্য করুন