শিল্পে বিনামূল্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধে নীতিমালা হচ্ছে: পরিবেশ উপদেষ্টা

শিল্পে বিনামূল্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন প্রথা বন্ধ করার নীতিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, এই নীতিমালা অনুসারে শিল্পে বিনামূল্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের প্রথা বন্ধ হবে।
বুধবার রাজধানী ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে বিশ্বব্যাংকের ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্সেস গ্রুপ এবং পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো), পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানি সম্পদ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, এখন একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে, যারা গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশনসহ বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা করবে কীভাবে পানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, পুনর্ব্যবহার বাড়ানো যায়, এবং দূষিত পানি সরাসরি নদীতে ফেলা বন্ধ করা যায়।
তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। যেমন অনলাইন মনিটরিং চালু করা। ভূগর্ভস্থ পানির অনিয়ন্ত্রিত উত্তোলন বন্ধে এই কর্মপরিকল্পনা শিগগিরই শুরু হবে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে একটি ‘শিল্পখাতে পানি ব্যবহারের নীতিমালা’ খসড়া প্রস্তুত করেছে,এই কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন এখন ভূগর্ভস্থ পানিকে করপোরেট সেক্টর ফ্রি রিসোর্স হিসেবে নিচ্ছে। সেটা আর চলতে পারে না। পানি সীমাহীন নয়, আর জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে বিনা মূল্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন চলতে পারে না।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, পানি পুনঃব্যবহারের লক্ষ্যে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ন এবং প্লাটফর্ম সৃষ্টি একটি সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী উদ্যোগ।
রিজওয়ানা বলেন, আমরা ভূগর্ভস্থ পানি এবং ভূউপরিস্থ পানির অভাবে ভুগছি। ঢাকা একটি শহর, যার সাতটি নদী আছে চারপাশে। পৃথিবীতে কয়টি রাজধানী শহর আছে, যাদের সাতটি নদী ঘিরে রেখেছে ? অথচ এই শহরের মানুষকে সুপেয় পানি দিতে হলে, মেঘনা পর্যন্ত যেতে হয়। প্রতি বছর দেখা যায় নির্দিষ্ট সময়ে নদীতে মৃত মাছ ভেসে ওঠে দূষণের মাত্রা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার কারণে। একদিকে শুনবেন কেউ নদী দখল করে দূষণ করছে ‘উন্নয়ন’ এর নামে, আর অন্যদিকে মানুষ নিরাপদ ও পরিষ্কার পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। যেখানে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি হয়তো ২০০০ শ্রমিককে চাকরি দিচ্ছে, সেই একই কারখানা নদী দূষণ করে হয়তো কয়েকটি গ্রামের মানুষকে জীবিকা থেকে বঞ্চিত করছে। এভাবে কোনো উন্নয়ন হতে পারেনা। এইখানেই আমাদেরকে টেকসই উন্নয়নের কথা চিন্তা করতে হবে।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘পানি মানেই জীবন’। এই সহজ সত্যটি আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং অস্তিত্বের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তবুও, বাস্তবতা হলো আমাদের অমূল্য পানি সম্পদ আজ সংকটাপন্ন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়নের চ্যালেঞ্জ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব একত্রে আমাদের পানির ঘাটতি ও দূষণকে দেশের সবচেয়ে জটিল হুমকি গুলোর মধ্যে অন্যতম হুমকি হিসাবে পরিণত করেছে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, আমাদের নীতিমালা ও পদক্ষেপসমূহ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পানি সম্পদ সংরক্ষণের প্রতি সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে। আমরা শিল্প বর্জ্য ও পৌর বর্জ্য থেকে পানি দূষণ রোধে ওয়াটার কোয়ালিটি ইনডেক্স প্রনয়ণ, ব্লু নেটওয়ার্কসহ অনেক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এবং পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছি। এই বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ডব্লিউএ আর পিও), পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব ব্যাংকের ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্সেস গ্রুপকে পানি নিরাপত্তার সমস্যার সমাধানে সব স্টেকহোল্ডারদের একত্রে নিয়ে আসার এই উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
উপদেষ্টা বলেন, আশা করি এই প্লাটফর্ম, সরকারি-বেসরকারি এবং সুশীল সমাজের মধ্যে একটি কার্যকর সেতুবন্ধন হিসেবে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, পানি নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করতে সক্রিয়ভাবে এ প্ল্যাটফর্ম ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড.শেখ আব্দুর রশীদ এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান।
(ঢাকাটাইমস/২১মে/এমআর)

মন্তব্য করুন