বিএনপিকে জামায়াত আমিরের কটাক্ষ!
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে দূরত্ব যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ এর প্রকাশ দেখা গেলো জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তৃতায়। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের অতীতের দিকে তাকান। ভালো করলে জনগণ আপনাদের আবারও বেছে নেবে’।
কথাটি তিনি বলেছেন রাজধানীর মিরপুরে মনিপুর স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে মিরপুর পূর্ব থানা জামায়াতে ইসলামীর এক অনুষ্ঠানে।
কোন কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই কি জামায়াতে ইসলামীর আমির বিএনপিকে ইঙ্গিত করে এমন কটাক্ষ করলেন? নিশ্চয়ই না। কারণ বিগত কিছুদিন ধরে এক সময়ের মিত্র দল দুটির মধ্যে টানাপোড়েন। এই টানাপোড়েন শুরু হয় অন্তর্বর্তীকালীন বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন এবং বিচার বিভাগে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা থেকে। অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর পরই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ আর বিচার বিভাগে নিজেদের সমর্থকদের বসানোর চেষ্টায় অনেকটাই সফল হয় জামায়াতে ইসলামী। শুরুতে খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও পরে বিএনপি পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনে নিজেদের সমর্থকদের বসাতে থাকে। এই প্রতিযোগিতা পরবর্তীতে টানাপোড়েনে রূপ নেয় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে। বিএনপি রাষ্ট্রের বিবিধ প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম সংস্কার করে যথাসম্ভব দ্রুত নির্বাচনে যেতে চায়। কারণ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলেই বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত। তাই দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকারের বদলে নিজেদের পূর্ণাঙ্গভাবে ক্ষমতায় দেখতে চায় বিএনপি।
অন্যদিকে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর উপলব্দি হচ্ছে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হলে তারা এখনই ক্ষমতায় যাওয়ার মত সামর্থ্য অর্জন করেনি। একারণে তারা নিজেদের লক্ষ্য ঠিক করে ভিন্ন দিকে। জামায়াতে ইসলামীর এখন প্রধান চাওয়া আওয়ামী লীগ আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত তাদের দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেওয়ার বদলা নেওয়া।
দলটি চায় নির্বাচনের আগেই গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত কয়েকজন নেতার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তখন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের শাস্তি নিয়ে বিএনপি সরকারের অবস্থান ভিন্ন রকমও হতে পারে।
একারণেই এক সময়ের মিত্র হলেও দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে বিএনপির দাবির বিপক্ষে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান। তবে নির্বাচনের সময় নিয়ে সরাসরি বিএনপির বিরোধিতা না করে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তারা বলছে, নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। এই যৌক্তিক সময়কাল কেমন, সেটি তারা এখনও ব্যাখ্যা করেনি।
অন্যদিকে বিএনপির সন্দেহ, ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের নেপথ্যে উৎসাহ যোগাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনের সময় প্রশাসনে বসানো নিজেদের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেই রাজনৈতিক দলকে বিএনপির বিরোধিতা করতে মাঠে নামানো হবে। এরইমধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্যোক্তা কয়েকজন ছাত্রনেতার মুখে বিএনপি-বিরোধিতার তেমন বক্তব্যই বের হচ্ছে।
বিএনপি তার আপাত বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য পুরনো ও নতুন দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দিতে নারাজ। অন্যদিকে বিএনপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিরোধী জোট তৈরি করে তাদেরকে চাপে রাখার জন্য অনেকটা লম্বা সময় চায় জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়েই এখন শুরু হয়েছে দুই দলের বাগযুদ্ধ।
(ঢাকাটাইমস/০৭জানুয়ারি/এমএইচ)
মন্তব্য করুন