বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মাছের মেলা   

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৯| আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১
অ- অ+

বগুড়ার ইছামতি নদীর তীরে বসেছে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মাছের মেলা। পোড়াদহ এলাকায় এই মেলার গোড়াপত্তন ঘটে প্রায় সাড়ে ৪শ বছর আগে।

কথিত আছে, ওই সময় মেলা সংগঠনের স্থানে একটি বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। একদিন সেখানে এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব হয়। পরে দলে দলে সন্ন্যাসীরা এসে একটি আশ্রম তৈরি করে।

একপর্যায়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে সেটি পুণ্যস্থানে পরিণত হয়। পরবর্তীতে প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এতে সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে পূজার দিনটিতে গ্রাম্য মেলার গোড়াপত্তন হয়। এক সময় সন্ন্যাসীরা স্থানটি ত্যাগ করলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সন্ন্যাসী পূজা বন্ধ করেনি। এভাবেই বাড়তে থাকে মেলার পরিচিতি।

মেলাটি সন্ন্যাস মেলা, মাছের মেলা নামে পরিচিত। তবে হাল আমলে এসে মেলাটি জামাই মেলা নামে বেশি পরিচিত। যে কারণে রীতি অনুযায়ী শ্বশুরবাড়িতে সবচেয়ে বড় মাছ কিনে নিয়ে যেতে চলে জামাইদের নীরব প্রতিযোগিতা।

জানা গেছে, মেলা উপলক্ষে আগের রাত থেকেই গাড়িতে আনা হয় বড় বড় মাছ। মিষ্টি দোকানে ধুম পড়ে নানান স্বাদের মিষ্টি বানানো। ভোর হওয়ার সাথে সাথে শ্বশুর বাড়ির স্বজনদের নিয়ে মেলায় আসেন এলাকার জামাইয়েরা। পোড়াদহ মেলার প্রধান আকর্ষণ বিশাল বিশাল মাছ। এরপর পাতা আকৃতির বড় বড় মিষ্টির। এই মিষ্টিগুলোর ওজনও হয় সাধারণ মিষ্টির চেয়ে অনেক বেশি। কোনোটা ৫ কেজি আবার কোনোটা ২০ থেকে ৪০ কেজিও।

এছাড়া মেলায় কাঠের আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, কসমেটিকস, খেলনাসহ প্রায় চার হাজার দোকানে মিলবে সংসারের যাবতীয় সবকিছু।

মেলায় মাছ কিনতে আসা শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতিবছর মেলায় মাছ কিনতে আসি। এবারো এসেছি। ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি। পোড়াদহ মেলা বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। মেলায় বিগত বছরে বড় বড় মাছ উঠতো। এবারের মেলায় তুলনায় বড় মাছ উঠেনি।

৯ হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে প্রায় দশ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ কিনেছেন আবু তাহের বুলবুল। গত আড়াই বছর হলো তিনি গাবতলী উপজেলার কলাকোপা গ্রামের জামাই। তিনি জানালেন, মেলায় মাছের আমদানি কম। আরও বড় মাছ কেনার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আমদানি তেমন না থাকায় কিনতে পারলাম না। শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাকে পর্যাপ্ত টাকা দেয়া হয়েছে। আর বাকি টাকা যা লাগছে তা দিয়ে মাছটা কিনেছি।

গাবতলীর মড়িয়া গ্রামের রাফি বলেন, মেলা উপলক্ষে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা খরচ করা হয়। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে জামাইসহ যার যত আত্মীয়স্বজন আছে প্রত্যেককেই দাওয়াত দেয়া হয়। তাই প্রতিটি পরিবার থেকেই বড় আকারের মাছ কেনার এক প্রকার প্রতিযোগিতা থাকে। এছাড়া একেকজন মিষ্টিও কেনেন ১০ থেকে ১৫ কেজি। যার বাড়িতে বেশি মেহমান উপস্থিত হয়, সে বাড়িতে এক মণ মিষ্টিও কেনা হয়।

মাছ ব্যবসায়ী সুজন বলেন, আমরা প্রতি বছর সিরাজগঞ্জ থেকে যমুনা নদীর মাছগুলো বেশি নিয়ে আসি। এবার মাছের দাম একটু কম। আমরা পাঙ্গাস, কাতল, চিতল, আইড়, রুই, ব্রিগহেড মাছ নিয়ে আসছি। আমরা প্রতি বছর ১৫-২০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করি।

আব্দুল বারী নামে এক মিষ্টি বিক্রেতা জানালেন, তিনি ১০ লাখ টাকার মিষ্টি বিক্রি করবেন। তার মিষ্টি ফেরত যায় না। তার দোকানে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি পর্যন্ত মিষ্টি রয়েছে। মাছ মিষ্টিগুলোর ওজন ১০ কেজি থেকে ১৫ কেজি। এই মিষ্টিগুলোই ৫০০ টাকা কেজি। আর লাভ মিষ্টি ৩০০ টাকা কেজি। তিনি প্রতিবার মেলাতেই মিষ্টি দোকান নিয়ে হাজির হন।

মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল মজিদ মণ্ডল বলেন, মেলাটি মূলত মাছের। মেলায় প্রায় ৫০০টি মাছের দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলোতে একদিনে ৫ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়।

গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিক ইকবাল বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের একটি টিম কাজ করেছে।

(ঢাকা টাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে জুনে শ্রীলঙ্কা সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ
কলাবাগান ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় নতুন ওসি
শরীয়তপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু
হিথ্রো বিমানবন্দরে খালেদা জিয়া, গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলেন তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা