জামায়াতে ইসলামী ইলেকশন চায়, সিলেকশন চায় না: ডা. তাহের

জামায়াতে ইসলামী ইলেকশন চায়, সিলেকশন চায় না, মেনেও নিবে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সরকারের নির্বাচনের রোডম্যাপকে শুধুমাত্র একটি দল স্বাগত জানিয়েছে। গনতন্ত্রকামী দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো স্বাগত জানায়নি, জানাতে পারেনি। কারণ নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রের সংস্কার, সকল গণহত্যার বিচার নিশ্চিত এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি৷ স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও এদেশের জনগণ একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখেনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জাতি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা করেছে। এজন্য রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার চেয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণাও দিয়েছিলো রাষ্ট্রের সংস্কার করবে। কিন্তু এই সরকারের উচিত ছিল আগে নিজেরা যেই চেয়ারে বসেছে সেই চেয়ার গুলো ধুয়েমুছে পরিস্কার ও পবিত্র করা। কারণ তারা সংস্কারহীন অপবিত্র, অপরিষ্কার চেয়ারে বসে নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়েছে।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর রোডে (পানির ট্যাংকি সংলগ্ন সড়ক) এলাকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর (উত্তর ও দক্ষিণ) উদ্যোগে জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান এবং সেই আলোকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল পূর্বক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, মাসের পর মাস সংস্কারের নামে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ডেকে নিয়ে পরিশেষে সংস্কারের আইনি ভিত্তি দিতে পারবে না বলে সরকার জাতির সাথে তামাশা করেছে। জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক উপায় আলী রীয়াজ দেখাতে না পারলেও আমরা দেখাতে পারবো মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের সেই দায়িত্ব দেন, আমাদের সাথে বসেন। মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা না করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
দেশের ৭১ শতাংশ জনগণ পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাইলেও, একটি দল জনগণের মতের বিপক্ষে উল্লেখ করে সাবেক এমপি ডা. তাহের বলেন, অধিকাংশ জনগণের মতামত মেনে নেওয়ার নামই ডেমোক্রেসি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কর্তৃক পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। যেই রাজনৈতিক দলের নেতারা পিআর বুঝে দাবি করে তিনি ঐ নেতাদের দেশের রিকশা চালক, ভ্যান চালক, চা-পান বিক্রেতার কাছ থেকে পিআর বুঝে নিতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, দেশের সাধারণ জনগণ পিআর পদ্ধতি বুঝলেও একটি মাত্র দল দাবি করে তারা পিআর বুঝে না। আসলে তারাও পিআর বুঝে! কিন্তু মেনে নিতে চায় না। কারণ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ভোট চুরি করতে পারবে না, ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে শোষণ করতে পারবে না। এজন্যই তারা পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
যারা পার্লামেন্টে গিয়ে সংস্কার করবে বলতেছে, এখন সংস্কারের আপত্তি কেন প্রশ্ন রেখে বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার করবে বলা দল কিভাবে নিশ্চিত হয়েছে তারাই এবার ক্ষমতায় বসবে?- তাদের এই কথায় জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। এতে বুঝা যায়, তারা হাসিনা মার্কা যেনতেন একটি তামাশার নির্বাচন করতে চায়। জনগণের মতের বিপক্ষে গিয়ে আরেকটি ওয়ান- ইলেভেন সৃষ্টি না করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনতিবিলম্বে জনগণের দাবি মেনে জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি দিতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ঘোষণা দিলেও বাস্তবে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। পরিবেশ থাকলে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের একজন উপদেষ্টা পদে থেকে বলতে পারতো না, দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে জীবন নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবে না! প্রকাশ্যে জনগণকে হুমকি দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার পরও তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কার পক্ষে কাজ করছে জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। কোনো দলের পক্ষ হয়ে কাজ করলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে হুশিয়ারি করে তিনি নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন প্রমুখ। এছাড়াও সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল সমাবেশের কারণে নগরবাসীর সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই কষ্ট দেশ ও জাতির আগামীর ভাগ্য নির্ধারনের জন্য, জামায়াতে ইসলামীর সকল কর্মসূচি দেশ ও জাতির স্বার্থে। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অপূর্ণাঙ্গ জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচিত সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি দিবে! কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নাকি সাংবিধানিক সেই ক্ষমতা নেই! নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে কোন সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করতেছে। বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের আনুগত্য না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণভোটের মাধ্যমে জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। পিআর পদ্ধতি জামায়াতের রাজনৈতিক দাবি নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দাবি প্রতিটি নাগরিকের মতামতের মূল্যায়নের জন্য। পিআর পদ্ধতিতেই জনগণের সরকার ও সংসদ গঠিত হয়। তাই পিআর পদ্ধতি সহ ৭ দফা দাবি মেনে নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে, বিজয়নগর থেকে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/জেবি)

মন্তব্য করুন