নাঙ্গলকোটে ১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলো ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনে!

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে দুই দিনে ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রেখে ১৪টি ইউনিয়ন সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) ও গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় এসব রাজনৈতিক সম্মেলন।
আজ বুধবার বন্ধ রাখা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, ঢালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হেসাখাল ইউনিয়নের দায়েমছাতি উচ্চ বিদ্যালয়, বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের বাঙ্গড্ডা ফাজিল মাদরাসা।
মঙ্গলবার বন্ধ ছিল উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের ভোলাইন বাজার স্কুল এন্ড কলেজ, ভোলাইন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বটতলী ইউনিয়নের বটতলী এম এ মতিন উচ্চ বিদ্যালয়, বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বক্সগঞ্জ ইউনিয়নের বক্সগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, বক্সগঞ্জ আলিম মাদরাসা, বক্সগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জোড্ডা পূর্ব ইউনিয়নের জোড্ডা বাজার পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, জোড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জোড্ডা বাজার সিদ্দিকীয়া আলিম মাদরাসা, জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের দুয়ারিয়া জা'মিউল উলূম কওমী মাদ্রাসা।
অভিযোগ উঠেছে, সম্মেলনের বিষয়ে আগে থেকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি শিক্ষার্থীদের। ক্লাস করতে শিক্ষার্থরিা স্কুলে এসে দেখে মাঠে সম্মেলন মঞ্চে শত-শত নেতাকর্মীর উপস্থিতি। এরপর স্কুল-মাদরাসাগুলো ছুটি দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্মেলন মঞ্চের মাইকের শব্দ উপেক্ষা করে কয়েক ঘণ্টা ক্লাস চালিয়ে ছুটি দিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪ ইউনিয়ন সম্মেলন ১২ ও ১৩ আগস্ট করার ঘোষণা দেন দলীয় একাংশের নেতারা।
ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ৭ ইউনিয়ন ও বুধবার ৭ ইউনিয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে দৌলখাঁড়, আদ্রা উত্তর, রায়কোট দক্ষিণ ও পেরিয়া ইউনিয়ন সম্মেলন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে না করে অন্যত্র আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া মৌকরা ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন সম্মেলন স্থগিত করে জেলা বিএনপি।
বাকি ১০ ইউনিয়ন তাদের সম্মেলন মঞ্চ তৈরি করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে। একই মাঠে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় ইউনিয়ন সম্মেলনের জন্য মোট ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঙ্গড্ডা ফাজিল মাদরাসার আলিম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মাদরাসার ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর দলে-দলে বিএনপির লোকজন মিছিল নিয়ে এসে মাদ্রাসা মাঠে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে আমাদের শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে মাদ্রাসা ছুটি দিয়ে দেন।’
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘বাঙ্গড্ডায় অনেক খালি জায়গা আছে। বিএনপির লোকজন চাইলে অন্য কোথাও তাদের সম্মেলন করতে পারত আথবা প্রতিষ্ঠান ছুটির পর করতে পারত। প্রতিষ্ঠান চলাকালীন এভাবে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করা উচিত নয়।’
জোড্ডা বাজার পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেফায়েত উল্লাহ বলেন, বিএনপির ইউনিয়ন সম্মেলনের অনুষ্ঠানে মাইকিংয়ের আওয়াজ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়।
নাঙ্গলকোট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার খবর শুনে প্রধান শিক্ষকদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তারা জানান বিএনপির ইউনিয়ন সম্মেলন থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েক ঘণ্টা চালিয়ে ছুটি দিয়েছে। আমি তাদের পরামর্শ দিয়েছি প্রতিষ্ঠান প্রধানের হাতে থাকা তিন দিনের বিশেষ ছুটি থেকে এক দিনের ছুটি এখানে দেখানোর জন্য।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দলীয় কোনো কার্যক্রম করার বিধান বিএনপিতে নেই বলে জানান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক নজির আহমেদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘নাঙ্গলকোট উপজেলায় যে প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন সম্মেলন হচ্ছে এটি দলীয় গঠনতন্ত্রবিরোধী। দলের বদনাম করার জন্য যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তথাকথিত ইউনিয়ন সম্মেলনের আয়োজন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানাব।’
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন সরকার বলেন, ‘বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন