পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী: প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নদীভাঙনে টিকে থাকা মানুষের গল্প

পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী, যা চারদিকে নদী ও সাগরের মাঝে অবস্থিত, সেখানে মানুষের টিকে থাকার লড়াই প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নদী ভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মোকাবিলায় নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। এই দ্বীপে আধুনিক চিকিৎসাসেবা ও পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাব থাকলেও জীবনের সংগ্রাম থেমে থাকে না।
রাঙ্গাবালী ২০১২ সালে উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এখানকার মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা আগুনমুখা নদী, যা সাত নদীর মিলনস্থল হিসেবে পরিচিত। ফেরি না থাকার কারণে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই, যোগাযোগ চলে নৌকাযোগে। উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন, যার ফলে প্রতিটি ইউনিয়নের মধ্যে চলাচল নদীপথে সীমাবদ্ধ। দুর্যোগ মৌসুমে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণে রোগী পরিবহন, শিক্ষার্থী চলাচল, খাদ্য ও পণ্য পরিবহণ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
চিকিৎসা সেবার অভাব দেখা দেয় চোখে পড়ার মতো। এখানে কোনো সরকারি হাসপাতাল নেই, এমবিবিএস চিকিৎসকও নেই। গ্রাম্য ডাক্তার ও হেকিম-কবিরাজের ওপর নির্ভরশীল চরবাসী। ২০২৩ সালে ৫০ শয্যার রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ শুরু হলেও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে।
উপজেলার চালিতাবুনিয়া ও চরমোন্তাজ ইউনিয়ন নদী ভাঙনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক পরিবারই একাধিকবার বসতভিটা হারিয়েছে, কেউ কেউ মাতৃভূমি ছেড়ে নতুন স্থান বা শহরে পাড়ি দিয়েছেন।
শিক্ষার প্রসারও চোখে পড়ার মতো কম। চরকাশেম ও চরনজির নামের দুটি চর এলাকায় এখনও কোনো বিদ্যালয় নেই। অর্থনৈতিক অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের পড়াশোনার সুযোগ খুবই সীমিত।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, তেমনি অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি নিচু এলাকার ঘরবাড়ি ও ফসল তলিয়ে যায়। এতে কৃষি ও মৎস্যনির্ভর মানুষের জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। মাছের প্রজননক্ষেত্র ও নদীর মিঠাপানি হ্রাসের কারণে মাছের সংখ্যা কমছে।
জীবিকার প্রধান দুটি খাত কৃষি ও মৎস্যতেও সংকট। আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না, ইলিশের ছড়াও কমে এসেছে। তরমুজ চাষেও আগ্রহ কমে গেছে কারণ রোগবালাই ও বাজার সমস্যা রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসক রাজীব দাশ পুরকায়স্থ জানিয়েছেন, ফেরি সেবা চালু হলে যোগাযোগের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে এবং শিক্ষা সম্প্রসারণেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাঙ্গাবালীকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে আলাদা পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আনা উচিত। জলবায়ু তহবিল ও দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো তৈরি করলে মানুষের জীবনমান উন্নত হবে।
(ঢাকাটাইমস/১২ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন