নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি, দিশেহারা সাধারণ মানুষ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বাজারের এই অস্থিরতা তাদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
অতিরিক্ত মুনাফার লোভে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে। বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল, শাকসবজি, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ প্রায় সব জিনিসের দাম বেশ কয়েকগুণ বেড়েছে। এতে করে সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে "নুন আনতে পান্তা ফুরোয়" অবস্থার শিকার হচ্ছেন।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সিন্ডিকেট এবং মজুতদারির কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, সাধারণ মানুষ দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছে, যাতে করে তারা স্বস্তিতে জীবনযাপন করতে পারে।
সবজির বাজারে স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। যে সবজি এক মাস আগে কেজি ২০ থেকে ৮০ টাকা দরে পাওয়া যেত, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। মুরগি, ডিম, মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ঈদের পর বাড়া চালের দাম কমারও কোনো লক্ষণ নেই। এদিকে হুট করে পিঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এমন বাড়তি দামে গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলু ও পেঁপে ছাড়া প্রায় সব সবজিই বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে। কাঁচা মরিচ ১৮০-২২০, করলা ৮০-১০০, বেগুন ১০০ থেকে ১২০, টম্যাটো ১৫০ থেকে ১৮০, গাজর ১৬০, দেশি শসা ১০০ ও হাইব্রিড ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বরবটি ১০০, পটোল, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ৭০-৮০, কচুর লতি ৮০, কচুর ছড়া ৬০-৮০, লাউ ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নগরীর অলিগলির সবজির দোকানগুলোয় প্রায় সবজি ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মানভেদে পিঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকা, যা তিন সপ্তাহ আগেও ৬০-৬৫ টাকা ছিল। পাড়ার দোকানে পিঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবজির সরবরাহ আগের চেয়ে অনেক কমেছে। আড়তে সবজি নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবজি আগের মতো আসছে না, তাই দাম বেশি। এ ছাড়া টানা বৃষ্টিতে অনেক পিঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমেছে, তাই দাম বেড়েছে। দ্রুত দাম কমার কোনো আশা দেখছেন না বলে জানান বিক্রেতারা।
দুই সপ্তাহ ধরে ডিমের বাজারেও অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ছিল ১২৫-১৩০ টাকা, এখন ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া হাঁসের ডিম ডজন ২২০, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০-১৮০, সোনালি মুরগি ৩০০-৩৩০, সোনালি কক ৩৭০ ও দেশি মুরগি ৬৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।
এদিকে ঈদের পর থেকে চালের দাম বাড়তি। বাজারে মিনিকেট ৮৫-৯২, নাজিরশাইল ৮৪-৯০, স্বর্ণা ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে রুই ৩৫০-৪০০, কাতলা ৪০০, পাঙাশ ২০০, চিংড়ি ৮০০, তেলাপিয়া ২৫০-২৮০, মাঝারি সাইজের কই ২৮০-৩০০, দেশি শিং ৭০০-৭৫০, বড় সাইজের পাবদা ৫০০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ফলের দাম বেশ চড়া। বিশেষ করে বিদেশি ফলগুলোর দাম বেশ বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আপেল, মালটা, আঙুর, আনারস, পেয়ারার মতো ফলের দাম গত কয়েক সপ্তাহে বেশ বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব রকমের ফলের দাম বেড়েছে। এই সময়ে আঙুর, আপেল, মাল্টার কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
এসব বাজারে প্রতি কেজি গালা আপেল বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা। সবুজ আপেল বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি, মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা আর লাল আঙুর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০০ টাকা।
অথচ এক সপ্তাহ আগেও বাজারে গালা আপেল বিক্রি হয়েছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, সবুজ আপেল বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা কেজি, মাল্টা বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা আর লাল আঙুর বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা কেজি।
অনেক পরিবার ফলের মতো পুষ্টিকর খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ দাম তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে এই সময় দাম সামান্য কিছু বাড়লেও হঠাৎ করে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক। তাদের অভিযোগ, রাজধানীতে মানুষের জ্বরের প্রকোপ বাড়ার সুযোগে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন ক্রেতা ও অর্থনীতিবিদরা।
(ঢাকাটাইমস/১৪ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন