নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণে ফিরল প্রাণচাঞ্চল্য

মো. হোসেন আলী, সাতক্ষীরা
  প্রকাশিত : ০১ মার্চ ২০২৫, ১৮:৩১
অ- অ+

দীর্ঘ দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাতক্ষীরার সুন্দরবনে আবারও শুরু হয়েছে কাঁকড়া আহরণ। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে উপকূলের হাজারো জেলে পরিবারে।

শনিবার ( মার্চ) সকাল থেকে বন বিভাগের অনুমতিপত্র (পাস পারমিট) নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করছেন জেলেরা।

তবে নিষেধাজ্ঞার গত দুটি মাস অনেক কষ্টে কেটেছে জেলে পরিবারগুলোর। অনেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালিয়েছেন। এখন তাদের ঘাড়ে ঋণের বোঝা।

নিষেধাজ্ঞার সময় প্রকৃত জেলেরা ঘরবন্দি থাকলেও অসাধু অনেক জেলে প্রভাবশালী মহল ও বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া নিধন করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

দাদনের বেড়াজালে জেলেরা

বুড়িগোয়ালিনীর আফছার সানা জানান, পাঁচ সদস্যের সংসার চালানোর একমাত্র উপায় সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ। নিষেধাজ্ঞার সময় মহাজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাদন নিতে হয় তাকে। এখন কাঁকড়া ধরে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। একই অবস্থা আকরাম হোসেনের। তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবন জীবিকার একমাত্র ভরসা সুন্দরবন। দুই মাস কাঁকড়া ধরা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেয়েছি।

কাঁকড়া আহরণে বিধিনিষেধ অনিয়মের অভিযোগ

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের আওতায় প্রায় হাজার ৯০০টি নৌকায় কাঁকড়া আহরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে সংরক্ষিত অভয়ারণ্য এলাকায় সারা বছরই কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার সময় অসাধু জেলেরা মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে ঢুকে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকার করেছেন। এতে প্রকৃত জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনিয়মে সহযোগিতা করেছে প্রভাবশালী মহল, মহাজনরা এবং বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। অসাধু এই চক্রটিকে সহযোগিতা করেন সাংবাদিক নামধারী কিছু ব্যক্তি।

বন বিভাগের অবস্থান

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. মসিউর রহমান বলেন, ‘কাঁকড়ার প্রজনন বাড়াতে দুই মাস নিষেধাজ্ঞা ছিল। মার্চ থেকে পাস পারমিটধারী জেলেরা নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া অন্য নদী-খালে কাঁকড়া আহরণ করতে পারবেন। তবে বেআইনি কর্মকাণ্ড রোধে টহল জোরদার করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের মুখে স্বস্তির হাসি

দুই মাস কাঁকড়া ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় দুর্বিষহ দিন কেটেছে উপকূলের দরিদ্র বনজীবীদের। সুন্দরবনসংলগ্ন দাঁতিনাখালী গ্রামের জেলে আব্দুল আজিজ মোড়ল বলেন, ‘সচ্ছল মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাদাই (সুন্দরবনে) যায় না। যারা যায়, তারা সবাই গরিব মানুষ। নিষেধাজ্ঞার দুই মাস চরম কষ্টে কাটিয়েছি। সরকার কোনো সহায়তা দেয়নি। এখন আবার কাঁকড়া ধরতে পারব, এতে একটু স্বস্তি পাচ্ছি।

জীবিকার সংগ্রামে জেলেরা

সুন্দরবনের কাঁকড়া আহরণ উপকূলের হাজারো দরিদ্র মানুষের একমাত্র জীবিকা। নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও কর্মচাঞ্চল্যে ফিরেছে বনজীবী পরিবারগুলোতে। তবে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ এবং সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা হলে জেলেরা আরও স্বস্তিতে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

(ঢাকাটাইমস/১মার্চ/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘ভাইয়ার দিকে খেয়াল রেখো’, খালেদা জিয়ার যে কথা প্রশংসা কুড়িয়েছে
পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী যার দুধের রঙ কালো, নাম শুনলে চমকে উঠবেন
ঢাকাসহ দেশের ১০ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস, নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত
এক দিনে ইয়েমেন লেবানন সিরিয়া ও গাজায় আক্রমণ, ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা