শাওয়াল মাসের ছয় রোজায় মিলবে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব

শাওয়াল মাসের ছয় রোজাকে ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। পূর্বসূরি আলেমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে রমজান মাসের রোজা পালন করতেন। শরিয়তের দৃষ্টিতে শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখা মুস্তাহাব।
শাওয়ালের ছয়টি রোজা অর্থাৎ শাওয়াল মাসের ছয় দিন রোজা রাখা হলো এক ধরনের নফল রোযা, যা রমজান পরবর্তী মাস শাওয়ালে রাখা হয়। মাসটি চান্দ্র বছরের মাসের ক্রমানুসারে দশম মাস এবং শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ব্যতীত অন্য দিনসমূহে ছয়টি রোজা রাখা জায়েজ। কারণ পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতরের দিন এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ। রোযা রাখার বিষয়ে ইমাম মুসলিম তার সহীহতে বর্ণনা করেন: "আবু আইয়ুব আল-আনসারী রা. থেকে বর্ণিত যে, মুহাম্মাদ সা. বলেছেন: "যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং তারপর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখে, সে সারা বছর রোজা রাখার মত হবে।" একটি বর্ণনায় আছে: “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল এবং তারপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর রোজা রাখল।”
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণ বছরই রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)
এক বছরের সমান হয় যেভাবে : রাসুলুল্লাহ (সা.) এক বছরের সমান হওয়ার বিষয়টিও ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হলো এক বছরের রোজা।’ (সুনানে নাসায়ি : ২/১৬২)
মুহাদ্দিসরা বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন ‘কেউ কোনো সৎ কাজ করলে সে তার ১০ গুণ সওয়াব পাবে এবং কেউ কোনো অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে। (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬)
এই হিসাবে রমজানের ৩০ রোজায় ৩০০ রোজার সওয়াব হয়। আর শাওয়ালের ছয় রোজায় ৬০ রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা মোট ৩৬০ রোজার সমপরিমাণ হয়।
যে ব্যক্তির রমজানের রোজা কাজা আছে, সে কোনো কারণে পূর্ণ রমজান মাস রোজা রাখেনি।
রমজান মাসের কিছুদিন রোজা রেখেছে। তাই তার উচিত আগে কাজা রোজাগুলো রেখে রমজান পূর্ণ করা। তারপর শাওয়ালের নফল ছয় রোজা রাখা।
রমজানের এক মাসের দশগুণ হলো ১০ মাস আর শাওয়াল মাসের ছয়দিনের দশগুণ হলো ৬০ দিন অর্থাৎ দুইমাস। সুতরাং ৩৬টি রোজায় সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
তবে, এরকম শর্ত থাকলেও শরিয়তসম্মত কারণে রমজানের পূর্ণমাস রোজা রাখেননি—এমন লোকদের শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখাতে মানা নেই। বরং সেক্ষেত্রে নফল রোজার সীমাহীন নেকি তিনি পাবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা নবীজি (স.) বেশিবেশি নফল রোজা নিজে তো রাখতেনই, সাহাবিদেরকেও উৎসাহিত করতেন। নফল রোজার মধ্যে আছে সাপ্তাহিক দুই রোজা (সোমবার ও বৃহস্পতিবার), মাসিক তিন রোজা (আইয়ামে বীজ তথা চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা), মহররম ও আশুরার রোজা, শাবান মাসের রোজা, শাওয়ালের ছয় রোজা, জিলহজ মাসের প্রথম দশকের রোজা বিশেষ করে ৯ তারিখের রোজার বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করতেন প্রিয়নবী (স.)।
(ঢাকাটাইমস/৩ এপ্রিল/আরজেড)

মন্তব্য করুন