নারীর পথের হেনস্থার শেষ কবে?

নাসিমা আক্তার তূরা
| আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:৪৬ | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:৩১

রাজধানীতে যাতায়াত বিড়ম্বনার। নারীর জন্য? কখনও কখনও রীতিমত সহ্যের সীমা পার হয়ে যায় নোংরা কিছু মানুষের জন্য। নারী যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে চালুও হওয়া সংরক্ষিত আসনও ভোগান্তি কমাতে কার্যকর প্রমাণ হয়নি। কর্মজীবী নারীদের জন্য আলাদা বাস চালু থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল।

যুগ আধুনিক হচ্ছে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক হচ্ছে মানুষ। কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শক্তিশালী অবস্থান করে নিয়েছেন তারাও। এই অবস্থাতে পথের বিড়ম্বনা আর হেনস্থার অবসান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নারীরা।

গণ পরিবহনে নারীর যৌন হয়রানি এবং নির্যাতনের অভিজ্ঞতা খুবই সাধারণ চিত্র। বাসে উঠা এবং নামা সময়ে সাহায্যের নামে হেলপারের স্পর্শকাতর স্থানে হাত বুলিয়ে দেয়া, পাশে বসে থাকা নারী যাত্রীদের গা ঘেঁষে বসা, গায়ে হাত দেয়া, ঘুমের ভান করে নারীর শরীওে হেলে পড়া, দাঁড়িয়ে থাকলে পেছনে সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দেয়া, অনুমতি ছাড়া গোপনে শরীরের বিশেষ অঙ্গেও ছবি তোলার মতো অভিজ্ঞতার শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

মুশফিকা নামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলছিলেন ‘আমার নিজের বাসে দাঁড়িয়ে যেতে কোন সমস্যা নাই। সমস্যা হচ্ছে পুরুষের আচরণে। তারা যে কোন নারীকেই ধরতে পারবে বলে ভাবে।’

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রত্মা বলছিলেন ‘নবীনগর থেকে এসে সাভারে বাহন ধরতে হয়। ক্লাস শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আমার সাথে খুবই খারাপ ঘটনা ঘটেছিল... আসে এমন ভিড় উঠছি এসি বাসে। বাসের মধ্যে বাতি নাই। আমরা ৫/৬ জন একসঙ্গে উঠছি। চাপাচাপিতে আমি এক সাইডে দাঁড়াই। হঠাৎ একটা হাত আমার শরীরে এমন কাজ করল আমি পাথর হয়ে গেলাম। আমি ধাক্কা দিচ্ছি, হঠাৎ উল্টো তিনি আমার গালেই চড় বসিয়ে দিলেন।’

‘এখন অন্ধকারে হাউমাউ শুরু হইছে, যতই আমারে বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলো, কে এইটা করেছে, আমি কিছু বলতে পারলাম না। আমি তো অন্ধকারে শয়তানটাকে চিনতে পারিনি। কার কথা বলবো?’-বলছিলেন ওই ভুক্তভোগী নারী।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তামান্না তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা কওে বলেন ‘আপনি বাসে উঠবেন, এমনভাবে পাশের লোকগুলো আপনার গায়ে লেগে বসবে সে ঘেন্না হয়। আমার বরও আমার সঙ্গে এভাবে বসে না। হাত এমনভাবে রাখবে যেন আপনার শরীরে লাগে..’। তিনি বলেন, “একবার পাশে বসা এক যাত্রীকে ধমক দিতে আমার পাশে বসা ভদ্রলোক খেকিয়ে বলেন, ‘আমার বাসায় আপনার চেয়ে সুন্দরী বউ আছে....’। আমি ধমকাবো কি, আশপাশের অন্য লোকেরা হেসেই খুন।”

এ তো গেলো যৌন হয়রানির কথা। ভিড় দেখলে নারী যাত্রীদেরকে বাসে তুলনে না চাওয়ার মধ্যে কী স্বার্থ রয়েছে, তা বুঝতে পারেন না ভুক্তভোগীরা। সকালে অফিস যাওয়ার সময় আর ফেরার পথে এই অভিজ্ঞতা বেশি হয়।

‘মহিলা সিট নাই অই অই লেডিস তুলিস না’- এমন কথা প্রতিদিনই শোনা যায়। পুরুষ যাত্রীরা কি এ নিয়ে ভাবেন? নিজেদের সঙ্গে নারী সঙ্গী না থাকলে খুব বেশি ভাবান্তর থাকে বলে দেখা যায় না। কারণ এ নিয়ে প্রতিবাদ করার উদাহরণ নেই বললেই চলে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে জান্নাতুল ফেরদৌস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নারী এবং পুরুষের জন্য ঢাকার অফিসের সময়সূচি একই। তাহলে গণপরিবহনে এমন কেন হবে?’।

বড় বাসে সংরক্ষিত নারী আসন থাকলেও সেখানে বসে থাকেন পুরুষরা। আর নারী যাত্রী এলে উঠে যেতে বললে কটূক্তি শুনতে হয়। আবার এই সংরক্ষিত আসন নিয়ে পুরুষ যাত্রীদের অনেকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি আছে। তারা ভাবেন, নারীদের জন্য বুঝি কেবল এই নয়টি আসনই বরাদ্দ থাকে।

জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘কেন নারীকে পাবলিক বাসে কেবল এই জন্য উঠতে দেয়া হয় না যে মহিলা সিট নাই? তার মানে কী ধরেই নেয়া হয় কেবল সংরক্ষিত সিট মানেই নারীদের সিট? কিংবা নারীরা কেবল সংরক্ষিত সিটে বসবেন? আসালে তা নয়, এই নয়টি আসনে নারী, প্রতিবন্ধী ও শিশুরা বসবেনই। বাকি সব আসনেও তাদের সমান অধিকার রয়েছে। যদি পাবলিক বাস রাষ্ট্রের জনগণকে পরিবহন সেবা প্রদানের কাজে নিয়োজিত হয়ে থাকে তাহলে সংরক্ষিত নয়টি আসন ছাড়া অন্য সিটগুলো পাবলিকের। এই পাবলিক কি কেবল পুরুষ? কখনই না।’

পুরান ঢাকা থেকে নিয়মিত ধানমন্ডি আসা যাওয়া করেন এক শিক্ষার্থী। পাশাপাশি কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘বাস পেতে রীতিমত লড়াই করতে হয়। ভিড় ঠেলে বাসে উঠা খুবই কষ্টকর। হেলপারদের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ তো আছেই। ওরা পিঠে হাত দেয়। নিষেধ করলেও শোনে না। বাসে উঠার পর সিট পাওয়া যায় না বেশিরভাগ দিন। মিনিবাসে তিন চারটি এবং বড় বাসে নয়টি সংরক্ষিত আসনে থাকলেও পুরুষ যাত্রীরা ওইসব আসনে বসে থাকেন। আর উঠতে বললে বলেন, সমান অধিকার চাইলে দাঁড়িয়ে চলাফেরা করতে শিখুন।’

বিআরটিসির নারী বাস

রাজধানীতে নারী যাত্রীদের জন্য সরকারি সংস্থা বিআরটিসির ১৫টি বাস রয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা আছে। এই বাসগুলো চলে ১৩টি রুটে। এই বাসগুলোর মধ্যে পাঁচটি দ্বিতল। প্রতিটি দ্বিতল বাসে আসন সংখ্যা ৭৫টি। আর একতলা বাসে ৫২টি। কিন্তু একটি রুটে একটি করে বাস আর কতটাই বা চাহিদা সামাল দিতে পারে?

দুটি রুটে কেবল দুটি করে বাস চললেও বাকি সব রুটে একটি করে বাস চলে। ফলে এই বাস পেতে অনেক ক্ষেত্রেই ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হয় যাত্রীদের। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় বলে এই বাসগুলো সেভাবে জনপ্রিয় হয়নি। কারণ, কখন কোন পয়েন্টে বাস পাওয়া যাবে, সেটা নিতান্তই অনিশ্চিত।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিআরটিসি বহরে নারীদের জন্য ১৫টি বিশেষ গাড়ি রয়েছে। আমাদের বহরে নতুন গাড়ি যোগ হলে সেখান থেকে নারীদের জন্য গাড়ি বাড়ানোর আরও পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

রুটভিত্তিক নারী বাস সার্ভিস:

মিরপুর ১২ নম্বর থেকে মতিঝিল রুটে চলে একটি দ্বিতল বাস। উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে মতিঝিল রুটে চলে একটি একতলা বাস।

জোয়ারসাহারা বাসডিপো থেকে শেওড়াবাজার থেকে এমইএস (নেভাল হেডকোয়ার্টার) পর্যন্ত চলে একটি একতলা বাস।

খিলগাঁও তালতলা থেমে গুলিস্তান পর্যন্ত চলে দুইটি দ্বিতল বাস। নতুব বাজার থেকে মধ্য বাড্ডা হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত চলে একটি দ্বিতল বাস। আবার নতুন বাজার থেকে গুলশান-২ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত চলে আরও একটি দ্বিতল বাস।

নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলে দুটি একতলা বাস।

মিরপুর-১০ তেকে মতিঝিল এবং মিরপুর-১৪ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলে আরও দুটি একতলা বাস।

সাভার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলে একটি দ্বিতল বাস।

গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলে আরও একটি একতলা বাস।

সবশেষে মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলে একটি একতলা বাস।

স্কুল বাস সার্ভিসঃ বিআরটিসির বর্তমানে মিরপুর-১২-আজিমপুর ভায়া মিরপুর-১০, ১, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, কলাবাগান ও নিউমার্কেট রুটে দুইটি স্কুল বাস ২৬টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে নিয়মিত চলাচল করছে ।

ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/এনএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

ভারতের রপ্তানির খবরে ১০ টাকা কমলো পেঁয়াজের দাম

অবন্তিকার আত্মহত্যা: এখনো মেলেনি তদন্ত প্রতিবেদন, থমকে গেছে আন্দোলন 

সড়কে এআইয়ের ছোঁয়া, বদলে যাচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা 

এখন তিন হাসপাতালে রোগী দেখছেন সেই ডা. সংযুক্তা সাহা

কোরবানির ঈদ সামনে, মশলার বাজারে উত্তাপ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :