জঙ্গি-যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি স্থগিত চায় কেন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’?

শেখ আদনান ফাহাদ
  প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০১৭, ২২:৪৪
অ- অ+

বিবিসি, সিএনএন কিংবা এপি-এএফপির মতো পশ্চিমা মিডিয়াগুলো যেমন নিয়মিতভাবে বাংলাদেশকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে থাকে। ‘মানবাধিকার’ নিয়ে কাজ করে এমন কিছু সংগঠনও আছে যাদের মূল কাজ হল বাংলাদেশের বিষয়ে সময়-সুযোগ বুঝে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা। ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ তেমনি একটি ‘মানবাধিকার’ বিষয়ক সংগঠন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক এই সংগঠনটির নাম যারা প্রথম শুনবেন কিংবা খোঁজ খবর রাখবেন না, তাদের মনে হবে এরকম সংগঠন আছে বলেই বোধহয় পৃথিবীতে মানবাধিকার আছে!! বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে এই সংগঠনের বিষয় নির্বাচন, বিবৃতি এবং এর ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিষয়ে যা বলা আছে, তা একটু পড়ে দেখলেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কেমন প্রতিষ্ঠান তা টের পাওয়া যায়।

মজার বিষয় হল, না সরকার, না আওয়ামী লীগ না সুশীল সমাজ; কেউই এই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর স্বার্থান্বেষী তৎপরতা নিয়ে তেমন কিছু বলে না। আওয়ামী লীগে কিংবা সরকারে তো ইংরেজি জানা মানুষের অভাব নেই। তাহলে অভাব কিসের? হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর মত ‘আন্তর্জাতিক’ সংগঠন দুরভিসন্ধি নিয়ে দিনের পর দিন বাংলাদেশ, সরকার ও এদেশের মানুষ নিয়ে যাচ্ছেতাই বলে যাবে তা হতে পারে না।

সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের এবং কুখ্যাত কয়েকজন সন্ত্রাসীর ফাঁসির রায় দেয়াতে এদের ফাঁসির আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ! অথচ, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বাংলাদেশ জুড়ে যে পেট্রলবোমা সন্ত্রাসে জাতি কাবু হয়ে পড়েছিল। সে সময় এই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কোনো রকম বিবৃতি আমরা দেখতে পাইনি। নোবেল ‘শান্তি’ পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশি নাগরিক ড. ইউনুসও অবশ্য কোনো রকম বক্তৃতা, বিবৃতি দিয়ে সে সময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি।

যাইহোক, বর্তমানে ফিরে আসি। বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগিরা। সেই মামলায় হান্নানের ফাঁসির চূড়ান্ত রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। অথচ, ফাঁসির রায় অবিলম্বে স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ!!।

যদিও এরা বলেছে, ‘তারা যে কোনো দেশে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই সর্বোচ্চ শাস্তি- মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে’, কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই দাবি ডাহা মিথ্যা। সাম্প্রতিককালে নারায়ণগঞ্জে সাতখুনের মামলায় বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক আসামির ফাঁসির রায় দিয়েছিল আদালত। তখন কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ফাঁসির রায় স্থগিত রাখার কোনো আর্জি জানায়নি।

২০১৬ সালের মে মাসে জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ও স্থগিত করার দাবি জানিয়েছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। জামায়াত কিংবা নিজামীর পরিবার সে আদেশ স্থগিতের দাবি বা আর্জি জানাতে পারে, সেই প্রাসঙ্গিকতা এদের আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একটি ‘মানবাধিকার’ সংগঠন কেন, কী উদ্দেশ্যে নিজামীর ফাঁসির আদেশ স্থগিত চাইবে সেটা নিশ্চয় ভাবনার দাবি রাখে।

মুফতি হান্নান নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কী পরিমাণ মনোযোগী ছিল সেটা টের পাওয়া যায় এর এশিয়া ডিরেক্টর ব্রাড অ্যাডামস এর বক্তব্য থেকে। মুফতি হান্নানের মামলার প্রতিটি মুভমেন্ট এবং অগ্রগতি এরা নজরে রেখে রীতিমত গবেষণা করেছে। দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি ছিল এদের।

ব্রাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেছেন, আদালতের নথিপত্র থেকে দেখা যায় স্বীকারোক্তি দেয়ার আগে মুফতি আব্দুল হান্নান ৭৭ দিন এবং অন্য দুই আসামি শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপন ৪০ দিন করে পুলিশি হেফাজতে ছিলেন। এসময় তাদের আইনি কোনো প্রতিনিধি দেয়া হয়নি এবং স্বীকারোক্তিগুলোও এ সময়ই নেয়া হয়েছে।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর ওয়েবসাইটে গিয়ে বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রোফাইলটা পড়ে দেখলাম। অনুবাদ এরকম- ‘বাংলাদেশ সরকার সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং সমালোচকদের ওপর ‘ক্র্যাকডাউন’ জোরদার করেছে। প্রশাসন রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যা ও গুম করেছে। অন্যদিকে ব্লগার, সমকামী অধিকার কর্মী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে জঙ্গিবাদী হামলা থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তদুপরি, জঙ্গি সহিংসতার প্রতি সরকারের বিশেষ প্রতিক্রিয়া নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে অযৌক্তিক গ্রেপ্তার, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রণোদনা দিচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্রমশ কথা বলা এবং সমাবেশ করার স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ করে যাচ্ছে’।

বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রোফাইলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর এই লেখার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর কোনো বক্তব্য আছে কি? বক্তব্য থাকতে পারা স্বাভাবিক। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে পরিচালিত আওয়ামী লীগের নানাবিধ গবেষণা সেলও এ বিষয়ে কিছু করছে কি?

বাংলাদেশ আইএস আছে প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লাগা কিছু দেশীয় ও পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম, আইএস এর আনঅফিসিয়াল মুখপাত্র ইহুদি নারী রিটা কার্টজ এর সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ এবং এই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, এটা বের করা সরকারের এখন গুরু দায়িত্ব। না হলে এরা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে বড় বড় মাছ শিকার করতে চাইবে বলে আমাদের আশঙ্কা।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মোহাম্মদপুরে ৩৮০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
সাংবাদিক সাইদুরের প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ 
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল সোমবার
এবার বাংলাদেশের চার টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ করল ভারত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা