নাটোরে প্রতিপক্ষের হামলায় তিনজন আহত

নাটোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:১৯

পূর্ববিরোধের জেরে নাটোরের সিংড়ায় আনসার আলী নামে এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে জখম করে দুই পা ভেঙে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। এসময় তার স্ত্রী মাবিয়া বেগম ও রাশেদা বেগম নামে প্রতিবেশী এক গৃহবধূকেও বেধড়ক মারপিট করা হয়। আহত আনসার আলীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যদের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার সকালে উপজেলার আনোলিয়া গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহত আনসার আলী ও তার পরিবার প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে গত তিন মাস ধরে গ্রাম ছাড়া।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, এলাকার আধিপত্য নিয়ে উপজেলার আনোলিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব হোসেন ও একই দলের সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস, সাজমুল হক ও জাহিদুলের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত জুন মাসে মাহবুবের পক্ষ নিয়ে উপজেলা যুবলীগের (বর্তমানে বহিষ্কৃত) সদস্য সম্রাটের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে ওই গ্রামে গেলে তাদের গণপিটুনি দেয় প্রতিপক্ষ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধ চরমে ওঠে। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশে বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়।

গত ১৮ জুন প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিরোধ মীমাংসার সিদ্ধান্ত হলে প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস আলীসহ তার সমর্থকরা সিংড়া সদরে আসার পথে জোলারবাতা এলাকায় যুবলীগ নেতা সম্রাটের নেতৃত্বে যুবলীগ কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এতে ইউনুসসহ তার ২০ সমর্থক আহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে মাহবুব তার পরিবার গ্রাম ছেড়ে সিংড়া সদরে বসবাস করছে।

শনিবার মাহবুব হোসেনের বাবা আনসার আলী প্রতিবন্ধী নাতি আব্দুস সালামের চিকিৎসা সহায়তা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড নিতে গ্রামের ওই বাড়িতে গেলে প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস আলীসহ তার লোকজন প্রতিবন্ধী শিশু আব্দুস সালামের দাদা আনসার আলীর ওপর চড়াও হয়ে বেধড়ক মারপিট করাসহ তার দুই পা ভেঙে দেয়। এসময় তাকে রক্ষা করতে গেলে তার স্ত্রী মাবিয়া বেগম ও প্রতিবেশী শামছুল ইসলামের স্ত্রী রাশেদা বেগমকে বেধড়ক মারপিট করে তারা।

মাহবুব হোসেন জানান, ইউনুস গংয়ের হুমকির মুখে তিনি ও তার পরিবার কয়েক মাস ধরে গ্রাম ছাড়া। প্রতিবন্ধী ছেলের কার্ড না থাকায় তিনি তার ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতাসহ চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন না কয়েক মাস ধরে।

শনিবার তিনি তার বৃদ্ধ বাবা আনসার আলী ও মা মাবিয়া বেগম তার ছেলের প্রতিবন্ধী কার্ড আনতে গ্রামের বাড়িতে গেলে ইউনুস, সাজমুল হক ও জাহিদুলের নেতৃত্বে তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখমসহ দুই পা ভেঙে দেয়। এসময় তার মা মাবিয়া ও মামী রাশেদা বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদেরও মারধর করা হয়। পুরুষ হয়ে তারা মহিলাদের ওপর নির্যাতন করে।

সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস আলী জানান, ঘটনার সময় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘটনার খবর শুনে তার স্ত্রী তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে দেখতে পাননি। লোকমুখে শুনেছেন, শনিবার সকাল ৬টার দিকে আনসার ও তার স্ত্রী বাড়িতে আসেন এবং একটি হাসুয়া নিয়ে তাদের ঝাড়ের বাঁশ কাটার সময় হৈ হৈ করে চিৎকার করতে থাকেন। এসময় কয়েকজন স্থানীয় যুবক গিয়ে মানা করলে তিনি তাদের মারতে উদ্যত হলে ওই যুবকরা তার ওপর চড়াও হয়। তবে কারা তাকে মেরেছে তিনি জানেন না। যেহেতু তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন এ ঘটনার সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। শুক্রবারও মাহাবুবের বাবা আনসার আলী গ্রামে এসে ঘুরে গিয়েছেন। গ্রামের অনেকেই তার সাথে কথা বলেছেন। এ ঘটনার সাথে পূর্ববিরোধের কোন যোগসাজশ নেই বলে তিনি দাবি করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম জানান, ওই দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছেন। উভয় পক্ষই আইনি লড়াই করছে। তবে দলের কর্মী হিসেবে তাদের উভয়ের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসার জন্য আবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

শনিবারের ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে এ ব্যাপারে যে দোষী তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এলাকার আধিপত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশও অমান্য করা হয়েছে। উভয় পক্ষই মামলা করে লড়ছেন। শনিবারের ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :