বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভারতীয় গীতিকারের ‘প্রথম গান’

বিধান চন্দ্র পাল
| আপডেট : ১২ মার্চ ২০১৭, ১৪:৫৩ | প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০১৭, ১৪:৫০

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অনেক গান লেখা হয়েছে, লেখা হয়েছে কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, নিবন্ধ অনেক কিছুই। কিন্তু ১৯৭১ সালে লেখা গানের বিশেষত্ব অন্যরকম। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান লিখেছিলেন ওপার বাংলার প্রখ্যাত কবি, ছড়াকার কাহিনিকার ও গীতিকার লক্ষ্মীকান্ত রায়। তাঁর লেখা সেই গানটিই শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা প্রথম বাংলা গান ছিল বলে সম্প্রতি তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন। লক্ষ্মীকান্ত রায়ের লেখা – “স্বাধীনতা কামী ‘বাংলাদেশের’ পরিত্রাতা কে? / সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আজ ভাগ্য বিধাতা কে? / একটি সুরেতে কে দিয়েছে বেঁধে বাঙালির অন্তর? / সেতো শেখ মুজিবুর! ধন্য হে মুজিবুর!!” গানটি লেখার আটাশ দিন পরে অংশুমান রায়ের অনন্য ও অত্যন্ত সুপরিচিত গান – “শোন একটি মুজিবের থেকে লক্ষ মুজিবের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণী বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।” গানটি লেখা ও রেকর্ড করা হয়েছিল।

লক্ষ্মীকান্ত রায়ের লেখা গানটির রেকর্ড প্রকাশিত হবার কয়েকদিন পরই শেখ মুজিবুরের দুই কন্যার উপস্থিতিতে তদানিন্তন বাংলাদেশ হাই কমিশনার হোসেন আলির হাতে সেই রেকর্ডের কপি লক্ষ্মীকান্ত রায় নিজ হাতে তুলেও দিয়েছিলেন বলে জানান। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি তিনি ওপার বাংলার বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী শ্রী সৌম্যেন অধিকারীকে একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান। (লক্ষ্মীকান্ত রায়ের নিজ মুখে উল্লেখিত এসকল কথা সম্প্রতি ইউটিউবেও প্রকাশ করা হয়েছে, যা এই লিংকে থেকে দেখা সম্ভব হবে: https://www.youtube.com/watch?v=IfUsZeIC6pQ) বাংলাদেশের সাংবাদিক মহলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে এই সত্য তথ্যটি বাংলাদেশের মানুষকে জানানোর জন্য তিনি ৭৭ বছর বয়সেও নিজে হাতে চিঠি লিখে এ সকল বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন।

চিঠিতে তিনি লেখেন “অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী নজরুল ইসলামসহ তাজউদ্দিনের কাছেও পৌঁছে দিই ঐ রেকর্ড। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রচারিত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে সেই গান নিয়মিত প্রচারিত হয়েছে। যুদ্ধকালীন অবস্থায় একটি প্রামাণ্যচিত্রে গানটি ব্যবহৃত হয়।” চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, “‘জয়বাংলা’ S.P. রেকর্ডটির রেকর্ড কভার (গানটি মুদ্রিত আছে cover back এ) পাঠালাম। যদি আপনাদের মত কিছু সাংবাদিকদের কাছে এবং শেখ মুজিবুরের সুযোগ্য কন্যার কাছে এই গান ও কাহিনী পৌঁছে যায়, আর আমি সম্মানিত হই এই মহৎ কাজের জন্য, নিজেকে ধন্য মনে করব।” তিনি বলেন, অস্থায়ী মন্ত্রীদের এবং হাইকমিশনারের প্রশংসাপত্র প্রিয় বন্ধু গায়ক দীপেন মুখার্জীর কাছে ছিল। তিনি এখন বেঁচে নেই। তাই সে কপিগুলি তিনি দিতে পারেননি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ থাকে যে, লক্ষ্মীকান্ত রায়ের জন্ম কলকাতায়। ১৯৫৭ সালে তাঁর প্রথম গানের বেকর্ড প্রকাশিত হয়। বেতার, দূরদর্শন, রেকর্ড, ক্যাসেট, টি.ভি, সিরিয়াল, যাত্রা, মঞ্চনাটক এবং বাংলা সিনেমায় সব ধরনের গান রচনায় বিশেষ পারদর্শিতার জন্য প্রচুর পুরস্কার এবং প্রশংসা অর্জন করেছেন। একাধিক ভাষাতেও বেশ কিছু গান রচনা করেছেন তিনি।

লক্ষ্মীকান্ত রায় হেমন্ত মুখার্জীসহ ভারতবর্ষের বহু নামী-দামী সঙ্গীত শিল্পীর ছায়াছবিতে এবং ব্যক্তিগত রেকর্ড ও ক্যাসেটে প্রায় চার হাজার গান লিখেছেন গত পঞ্চাশ বছর ধরে। শুধু তাই নয় শ্রদ্ধেয় সঙ্গীত শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জীবনের শেষ রেডিও‘র গান, ‘একটাই শুধু প্রশ্ন আমার, শ্মশানেতে কতো লোক হ’বে।’ যা সারা দেশ তোলপাড় করেছিল, সেই গানটিও লক্ষ্মীকান্ত রায়েরই লেখা। এই গানের জন্য তিনি অনেক সম্মান ও পুরস্কারও পেয়েছিলেন।

শ্রেষ্ঠ গীতিকার ও সুরকার হিসেবে তিনি অসংখ্যবার উত্তমকুমার এ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। এছাড়া তিনি গৌরীপ্রসন্ন স্মৃতি পুরস্কার (গৌরীপ্রসন্ন স্মৃতি সংসদ) ১৯৯৭, অপরেশ লাহিড়ী স্মৃতি পুরস্কার (বাপী লাহিড়ী প্রদত্ত) ১৯৯৮, হেমন্ত স্মৃতি পুরস্কার (অঙ্কুর) ১৯৯৯, হেমন্ত স্মৃতি পুরস্কার (গীত গীতাঞ্জলি) ২০০০, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার (বাংলা সঙ্গীত প্রচার সমিতি) ২০০৩, শ্রেষ্ঠ গীতিকার সম্বর্ধনা (বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদ) ২০০৪, গীত রচনার পঞ্চাশ বছরে স্বর্ণপদক (বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদ) ২০০৭ সহ বহু সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছেন।

বাংলাদেশ থেকে কোনো কবি সম্মেলনের আমন্ত্রণ পাবার প্রত্যাশাও বাংলাদেশের সাংবাদিক মহলকে উদ্দেশ্য করা চিঠিতে ব্যক্ত করেন গুণী শিল্পী লক্ষ্মীকান্ত রায়।

লেখক ও গবেষক: সদস্য সচিব, নলেজ ট্রাস্ট

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :