হাতকাটা নুর মোহাম্মদের জীবনযুদ্ধের গল্প

খুলনা ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১১ জুন ২০১৭, ২১:৩৩
অ- অ+

নুর মোহাম্মদ, বয়স ১২ বছর। খুলনা নগরীর গোয়ালখালী এলাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে তার বা-হাতের কব্জি কেটে যায়। তবুও থেমে নেই এই শিশু। অসুস্থ মায়ের মুখে খাবার ও ওষুধ জোগাড়ে তাকে খুব কষ্ট করেই একহাত দিয়ে রিকশা চালিয়ে আয় করতে হয়। তাতেও কোনো কষ্ট নেই তার, তবে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ায় বুকভরা কষ্টের কথা জানালো এ হতভাগা শিশুটি।

রবিবার খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ডিসি অফিসে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত খালি রিকশা সামনে এসে দাঁড়ায়। ‘মামা কোথায় যাবেন আসেন।’ তার একটি হাতের কব্জি নেই দেখে বললাম তুমি যেতে পারবে? সে বলে, হ্যাঁ, আসেন কোথায় যাবেন কন। বললাম ডিসি অফিসের সামনে ভাড়া কত, উত্তরে শিশুটি বলে তা জানি না যা ভাড়া তাই দিয়েন। উঠে পড়লাম, রাস্তায় তার সাথে আর কোনো কথা হয়নি। গন্তব্যে পৌঁছে তাকে একপাশে ছায়া জায়গায় নিয়ে দাঁড় করালাম।

এরপর অনেকক্ষণ আলাপ হয় শিশু নুর মোহাম্মদের সাথে। সে জানায়, নগরীর ৪ নম্বর ঘাট এলাকার রেললাইন সংলগ্ন গোডাউনের বস্তিতে মা তাসলিমা বেগমকে নিয়ে বসবাস করে। বাবা মোস্তফা সেই দুই বছর বয়সে মাকে ছেড়ে চলে গেছে, আর ফেরেনি। একটি বড় বোন আছিয়া খাতুন তারও বিয়ে হয়েছে একজন রং মিস্ত্রির সাথে।

নুর মোহাম্মদের মা তাসলিমা বেগম বাসা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে কাপড় বিক্রি করে, কিন্তু শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাও করতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে এক মাস আগে একহাত কাটা অবস্থায় শিশুটি জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েছে।

জীবনযুদ্ধের কাহিনী বলতে গিয়ে নুর মোহাম্মদ জানায়, মামা আমি খুব ভালো লেখাপড়া করতে জানতাম। রেলওয়ে প্রভাতী স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। এরপর মা অসুস্থ টাকা পয়সা নেই, খাবার জোটে না তাই বন্ধ হয়ে গেল। রিকশা চালানোর সময় স্কুলের ছাত্রদের দেখলে আমারও ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা মনে ওঠে। কিন্তু কন আমিকি আর কোন সময় স্কুলে যাইতে পারবো।

গত ২০১২ সালে গোয়ালখালী এলাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে নিচে পড়ে শিশু নুর মোহাম্মদ। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা শেষে এই শিশুটি একটি হাতের কব্জি হারায়।

ব্যাটারির রিকশা চালাতে কোনো সমস্যা হয় কি না তা জানতে চাইলে নুর মোহাম্মদ জানায়, অনেকে আমার হাত নেই দেখে উঠতে চায় না। এই কারণে রোজগার কম হয়। তার ওপরে আবার পুলিশ স্যারেরা রাস্তায় ঠিকমতো চলতে দেয় না।

একপর্যায়ে তার প্রশ্ন আপনি কি লেখেন মামা, আপনি কি পুলিশ? উত্তরে বললাম না আমি সাংবাদিক, কেন কী হয়েছে। মামা পুলিশ স্যারদের কাছে আমার কথা একটু কইয়া দেন আমিতো পঙ্গু তারা যেন আমারে একটু রিকশা চালাতে দেয়।

অদম্য নুর মোহাম্মদের সাহসী ভূমিকা দেখে এ সমাজের অনেক কিছু শেখার আছে। দায়িত্ব কর্তব্য ও মায়ের প্রতি ভালোবাসা এই শিশুটির পঙ্গুত্ব বাধা হতে পারেনি। তাই ওর সময় নষ্ট না করে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে ওকে ওর জীবনযুদ্ধের মাঠে পাঠিয়ে দিলাম।

(ঢাকাটাইমস/১১জুন/এসএএইচ/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পাচ্ছেন দুজন গবেষক ও এক প্রতিষ্ঠান
চট্টগ্রামে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেত্রীকে পুলিশের দিলেন বৈষম্যবিরোধীরা
বাণিজ্য বাধা কমিয়ে আনতে সামুদ্রিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে জোর পররাষ্ট্র উপদেষ্টার
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা: নওফেল-রেজাউলসহ ১২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা