‘পদ্মাবতী’র বিপক্ষে হল মালিকরাও
সাধের ‘পদ্মাবতী’ ছবি নিয়ে ঘোর বিপদে নির্মাতা সঞ্জয় লীলা বানসালি। শুটিংয়ের সময় থেকে একের পর এক বাধা ডিঙিয়ে আগাতে হচ্ছে তাকে। তবে এতো বাধার মুখে কতদিন আর টিকতে পারবেন সেটা নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়। শেষ পর্যন্ত ছবির মুক্তি আটকে গিয়ে বড় লোকসানের মুখে পড়ার সম্ভাবনাও দিন দিন প্রকট হচ্ছে বিগ বাজেটের এ ছবিকে ঘিরে।
এবার সেই সম্ভাবনাকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিলেন রাজস্থানের চলচ্চিত্র পরিবেশক ও হল মালিক সমিতির সদস্যরা। সেখানকার প্রভাবশালী পরিবেশক রাজ বানসাল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরাও ইতিহাস বিকৃতির বিপক্ষে। যত দিন পর্যন্ত না এই সিনেমা নিয়ে বিতর্কের অবসান হবে, তত দিন আমরা এই ছবির স্বত্ব কিনব না।’
কি হবে এখন বানসালির? নির্মাণের শুরু থেকে তার ‘পদ্মাবতী’কে ঘিরে সমালোচনার ঝড় বইছে। যে সমালোচনা শুরু হয়েছিল রাজস্থান থেকে। সেখানে শুটিং করতে গেলে স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভের মুখে সেট সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন পরিচালক বানসালি।
নির্মাণ শেষে ছবি মুক্তির দিন ঠিক হলে সেই রাজস্থান থেকেই আসে আরেক বাধা। হুঁশিয়ারি দেয় জয় রাজপুতানা সংঘ। ছবিতে রানী পদ্মাবতীর চরিত্রকে বিকৃত করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করে। হুঁশিয়ার করে বলে, আমাদের না দেখিয়ে রাজস্থানের কোনো হলে ‘পদ্মাবতী’ মুক্তি দিলে সেই হল পুড়িয়ে দেয়া হবে।’
তাতেও মুক্তি মেলেনি বানসালির। এর পর ‘পদ্মাবতী’র মুক্তি পেছাতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠায় ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। তাদের ধারণা নির্বাচনের আগে সমালোচনায় ঘেরা ‘পদ্মাবতী’ মুক্তি দিলে তা ভোটের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু বিজেপির সেই চিঠির আবেদন নাকোচ করে দেয় কমিশন। তারা বলে, ‘ভোটের সাথে ছবির কোনো সম্পর্ক নেই।’
এর পর সম্প্রতি ‘পদ্মাবতী’ ছবির মুক্তি ঠেকাতে মাঠে নামেন স্বয়ং ভারতের শিল্পমন্ত্রী গিরিরাজ সিং। তিনিও ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনেন বানসালির বিরুদ্ধে।চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘ওঁরা শুধু হিন্দু ধর্মের তথ্য বিকৃত করে ছবি বানায়। সাহস থাকলে বানসালি সাহেব অন্য ধর্মের তথ্য বিকৃত করে ছবি বানিয়ে দেখান। এসব চলতে দেয়া যাবে না।’
একদিন আগেও ‘পদ্মাবতী’ ছবিকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে বানসালিকে ব্যক্তিগত আক্রমন করে বসেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আরেক সাংসদ চিন্তামণি মালভিয়া। তিনি লেখেন, ‘বানসালির মতো লোকেরা অন্য কোনো ভাষা বোঝেন না। তাঁর মতো মানুষ শুধু জুতোর ভাষা বোঝেন। এই দেশ রানী পদ্মাবতীর অপমান কোনো ভাবেই মেনে নেবে না। আমরা ইতিহাসের কোনো প্রকার বিকৃতিই সহ্য করবো না।’ বানসালির বাড়ির মেয়েদের বেশ্যা বলেও সম্মোধন করেন ওই বিজেপি সাংসদ।
‘পদ্মাবতী’র বিরুদ্ধে শুরু থেকেই অভিযোগ। এ ছবিতে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে বলে দাবি সকল পক্ষেরই। ছবির কাহিনিকেও নাকি অনেক বেশি কল্পনামিশ্রিত করে ফেলেছেন বানসালি। আগামী ১ ডিসেম্বর মুক্তির কথা রয়েছে ‘পদ্মাবতী’র। কিন্তু মুক্তির আগেই যেভাবে বাধার মুখে পড়ছেন বানসালি ও তার ‘পদ্মাবতী’, তাতে ছবির ভবিষ্যত খুব একটা ভালো দেখছেন না ইন্ডাস্ট্রির বড় একটি অংশ।
ঢাকাটাইমস/৯নভেম্বর/এএইচ