উন্নয়নশীল দেশ তুরস্ককে যেমন দেখছি-৭

তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধা

রহমত উল্লাহ
 | প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট ২০১৮, ২১:৪৭

গত পর্বে তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে লিখেছিলাম। তুরস্কে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির দ্বিতীয় সেশন থেকেই ফলাফলের ভিত্তিতে শেষ বর্ষ পর্যন্ত কয়েক সেশন ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে পড়াশোনার সুযোগ নিতে পারেন। এ পর্বে তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করব।

তুরস্কে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রায় ২০-২৫ শতাংশ তুরস্ক সরকারের বৃত্তিতে পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়া নিজ খরচে পড়তে আসা অনেক শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়া এমনকি মাসিক ভিত্তিতে কিছু বৃত্তির সুযোগও হয়। তবে তুরস্কের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করে নিজের খরচ নির্বাহ ও দেশে টাকা পাঠানো অনেকটা কঠিন।

তুরস্ক সরকারের বৃত্তি (তুর্কি বুর্সলারি)

তুরস্কে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা তুরস্ক সরকারের বৃত্তি তথা ‘তুর্কি বুর্সলারি’ অর্জন করেন, তারা সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান। তুরস্ক সরকারের Presidency for Turks Abroad and Related Communities প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে থাকে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট পর্যায়ে দেওয়া এ বৃত্তির আওতায় বিনা বেতনে তুরস্কে পড়াশোনার ব্যবস্থা, বিনা খরচে থাকা-খাওয়া, সরকারি স্বাস্থ্যবিমা, প্রথমবার তুরস্কে আসা এবং কোর্স শেষে দেশে যাওয়ার বিমান ভাড়া এবং মাসিক নগদ হাতখরচ দেয়া হয়। হাতখরচ হিসেবে মাসে স্নাতক পর্যায়ে ৭০০ লিরা, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১০০০ লিরা এবং ডক্টরেট পর্যায়ে ১৪০০ লিরা পাওয়া যায়। পাশাপাশি রয়েছে ১ বছরের ফ্রি তুর্কি ভাষা শিক্ষা কোর্সের সুযোগ। থাকা-খাওয়ায় খরচ না থাকায় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে প্রতি মাসে দেশে কিছু টাকা পাঠানোর সুযোগ পান।

এই বৃত্তির জন্য প্রতি বছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। https://www.turkiyeburslari.gov.tr/ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখ থেকে মার্চের ৫ তারিখ পর্যন্ত স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট এবং এপ্রিলের ১৬ তারিখ থেকে মে মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের সেপ্টেম্বর মাসে তুরস্ক আসার ব্যবস্থা করা হয়।

সরকারি এ বৃত্তির আওতায় বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্বসহ সব ধরনের অনুষদ ও বিভাগে ছাত্র নেওয়া হয়ে থাকে। এ বৃত্তি ছাড়াও অন্যদেশে ডক্টরেট গবেষণারত অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যও রয়েছে ১২ মাসের গবেষণা বৃত্তি। বৃত্তির আওতায় মাসে ৩ হাজার লিরা বৃত্তি প্রদান করা হয়। তবে সেশন ফি, স্বাস্থ্যবীমা ও থাকার খরচ বহন করা হয় না। বছরের প্রায় সব সমই এ বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়।

তুর্কি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বৃত্তি (দিয়ানেত বুর্স)

তুরস্কের ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতি বছর স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে থাকে। উভয় পর্যায়েই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শিক্ষা খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচ, স্বাস্থ্যবীমার যাবতীয় খরচ এবং স্কুল পোশাকের খরচ বহন করা হয়।

এ ছাড়া স্কুল পর্যায়ে মাসিক ১৫০ লিরা এবং স্নাতক পর্যায়ে মাসিক ৩০০ লিরা পকেট খরচ দেয়া হয়। প্রতি বছর ৯ মাস এই নগদ অর্থ পাওয়া যায়। পাশাপাশি রয়েছে ১ বছরের ফ্রি তুর্কি ভাষা শিক্ষা কোর্সের সুযোগ। এ ছাড়া গ্রীষ্মের ছুটিতে ছাত্রদের দেশে যাওয়া-আসার বিমান টিকেট দেওয়া হয়।

এ বৃত্তির সবচেয়ে ভালো দিক হলো প্রথম আসা ও শেষ করে দেশে ফেরার টিকেটের পাশাপাশি প্রতি বছরই তুরস্ক সরকারের খরচে শিক্ষার্থীরা দেশে যাওয়া-আসা করতে পারেন। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের আবেদন প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলে। আবেদন ও বিস্তারিত তথ্য জানা যায় http://burs.tdv.org/ এবং https://www.turkiyeburslari.gov.tr/ ওয়েবসাইট থেকে।

তুরস্ক উচ্চশিক্ষা কমিশনের বৃত্তি

তুরস্কের উচ্চশিক্ষা কমিশন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিশেষ বৃত্তি চুক্তি করে থাকে। এ চুক্তির আওতায় বন্ধুদেশের প্রয়োজনীয় খাতে বিশেষজ্ঞ তৈরি করার ব্যবস্থা করে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গেও এমন একটি চুক্তি হয় তুরস্কের। এ চুক্তির আওতায় টেক্সটাইল খাতে বিশেষজ্ঞ তৈরির উদ্যোগ হিসেবে তুরস্কে প্রতি বছর সাতজন বাংলাদেশিকে ডক্টরেট করার জন্য বৃত্তি দেবে।

বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদের তুরস্কে প্রথম আসা ও শিক্ষা শেষ করে যাওয়ার সময় বিমান টিকেট (৫০ শতাংশ বহন করছে), বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যবীমা, মাসিক ১৪০০ লিরা হাত খরচ দেয়া হয়। পাশাপাশি রয়েছে ১ বছরের ফ্রি তুর্কি ভাষা শিক্ষা কোর্সের সুযোগ।

বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তিতে নেই খরচ, আছে অর্থ

তুরস্কের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রতি সেশনে কিছুসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তিসহ ভর্তি করে থাকে। এসব বৃত্তির আওতায় সেশন ফি ছাড়া পড়াশোনার সুযোগের পাশাপাশি পাওয়া যায় মাসিক নগদ বৃত্তি।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নগদ বৃত্তির পরিমাণ ১০০০ লিরা বা তার কিছু বেশি হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ২৫০০ লিরা পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে নতুন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে।

বিশেষ করে Ibn Haldun Üniversitesi, Istanbul Sabahattin Zaim Üniversitesi, Istanbul Iehir Üniversitesi, Istanbul Ticaret Üniversitesi, Fatih Sultan Mehmet Üniversitesi সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভালো মানের বৃত্তি দিয়ে থাকে। [চলবে]

আগামী পর্বে থাকছে: তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা

লেখক: সাংবাদিক ও পিএইচডি শিক্ষার্থী, কারাদেনিজ টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রাবজোন, তুরস্ক।

(ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

প্রবাসের খবর এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :