ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩

বিএনপিতে শ্যামল নির্ভার, আ.লীগে জনপ্রিয় মোক্তাদির

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৫৮

জেলা সদরের এই আসনে এখন আলোচনার শীর্ষে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। এত দিন বর্তমান এমপি র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীর মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত ছিল বলে জানা গেলেও, এখন সামনে চলে এসেছে জোটের প্রার্থীর প্রসঙ্গ।

প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি হাফেজ মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) অথবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর) আসনে লড়তে চান নৌকা প্রতীকে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে এই সম্ভাব্য মেরুকরণে অনেকটা নির্ভার বিএনপির একক প্রাথী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। তার পেছনে দলের নেতাকর্মীরা একাট্টা। মানুষ হিসেবেও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের।

সাধারণ মানুষের ভাষ্য, শ্যামলের বিপরীতে উবায়দুল মোক্তাদিরই আসলে শক্ত প্রার্থী। দলে কোন্দল থাকলেও তার নির্বাচনী প্রস্তুতি অনেক ভালো। সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন মুফতি হাসানাত আমিনী, যদিও তিনি দুই আসনে প্রচার চালাচ্ছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা এবং সদর ও বিজয়নগর উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে মোট ভোটার লাখ ১৪ হাজার ৪৬৩ জন। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা জয় পান বিএনপির অ্যাডভোকেট হারুন আল রশিদ।

২০০৮ সালে হাতছাড়া হওয়া আসনটি এবার ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি। সরকারি দলের মামলা-হামলার মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে জনসংযোগ করে নির্বাচনী মাঠ প্রস্তুত করেছেন ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল ও তার কর্মীরা। তারা মূলত উবায়দুল মোক্তাদিরকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ধরে নিয়ে নিজেদের প্রচারণা চালিয়েছেন। এখন জোট প্রার্থীর প্রসঙ্গ আসায় তারাও কিছুটা বিভ্রান্ত। কেননা দলটির প্রতি ইসলামী মনোভাবাপন্ন মানুষের সহানুভূতি আছে আগে থেকে।

বিএনপি জোটের সঙ্গে ১৭ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনে ২০১৬ সালে ২০-দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া ইসলামী ঐক্যজোট এবার ‘নৌকা’ প্রতীকে নির্বাচন করবে। প্রয়াত নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনীর এই জোট এবার কমপক্ষে চারটি আসন চাইছে আওয়ামী লীগের কাছে।

জোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামীর জন্য নরসিংদী-৩ ও ঢাকা-৫, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ জন্য চট্টগ্রাম-৭, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনীর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসাইনের জন্য কুমিল্লা-১ আসন চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হাসানাত আমিনীর আসনটি নিশ্চিত ধরে নিচ্ছেন তারা।

কিন্তু এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রধান মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান এমপি র আ ম উবায়দুল মোক্তাদিরের শক্ত অবস্থান রয়েছে। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জোটের হয়ে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধা। এবারও তিনি নির্বাচন করবেন। জাতীয় পার্টি চ্য়া আসনটি তাদের কাছে রাখতে। ফলে হাসানাত আমিনীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের কোনটি দেয়া হবে তা নিয়ে কেন্দ্রে আলোচনা হচ্ছে।

তৃণমূলে উবায়দুল মোক্তাদিরের জনপ্রিয়তা এবং জেলা কমিটির কিছু নেতার দ্বন্দ্ব দুটিই আলোচিত হচ্ছে। বিরোধী শিবিরের কেউ কেউ দলের মনোনয়ন পেতে চান। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম, সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাবেক সচিব মিজানুর রহমান মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছেন। এই বলয়ে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আমানুল হক সেন্টু।

আওয়ামী লীগে এই কোন্দলের ফলে সদর আসনের দিকে বেশি নজর হাসানাত আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোটের। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের মধ্যে আলেম-ওলামাদের ভালো একটা প্রভাব রয়েছে। নানা কারণে মুক্তাদিরের সঙ্গে আলেম-ওলামাদের সম্পর্ক ভালো নয় বলে প্রচার আছে। ফলে হাসনাত আমিনীর পক্ষে অবস্থান নেবেন আলেম-ওলামারা, এমন ধারণা তাদের ঐক্যজোটের। কিন্তু আবার সংশয় আছে, এ ক্ষেত্রে উবায়দুল মোক্তাদিরের অনুসারীদের সমর্থন হাসানাত আমিনী পাবেন কি না।

জানা গেছে, শহরের নেতাদের কেউ কেউ মোক্তাদিরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ালেও জেলা কমিটির বেশির ভাগ নেতা এমপির সঙ্গেই আছেন। পৌরসভার বর্তমান মেয়র নায়ার কবির, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা আছেন মুক্তাদিরের পক্ষে। তারা আশা করছেন মুক্তাদিরের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আর তার উন্নয়ন চেষ্টার কারণে মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনিই মনোনয়ন পাবেন। ইতিমধ্যে দলের কোন্দল বেশ কিছুটা মিটিয়ে আনা হয়েছে বলেও জানান তারা।

এখন দলের ভেতর যেটুকু দ্বন্দ্ব-কোন্দল অবশিষ্ট আছে, সেটাও মিটে যাবে বলে আশা করছেন মোক্তাদিরের সমর্থকরা। নেতাকর্মীরা বেশি সংশয়ে আছেন জোটের প্রার্থী নিয়ে। জোটের প্রার্থীর আলোচনা সামনে আসার পর অনেককে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায়।

তবে তারা আশা করছেন, শেষ পর্যন্ত হাসানাত আমিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। কেননা তার বাবা মুফতি ফজলুল হক আমিনী ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী সম্পর্কে নেতাকর্মীরা জানান, দলের যে কয়জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন মুক্তাদির ছাড়া আর কারও সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন পরিচিতি নেই। তারা মূলত বিরোধিতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ফলে তাদের আগাম নির্বাচনী প্রচারণা চোখে পড়ার মতো নয়।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে মাঠপর্যায়ে জনসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী। ইতিমধ্যে কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচনী কমিটি গঠনের কাজটিও শেষ করে রাখা হয়েছে বলে জানান এক নেতা। তিনি আরও জানান, মোক্তাদিরের নেতাকর্মী-সমর্থকরা তার আমলে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরছেন মানুষের কাছে। পোস্টারে, জনসংযোগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় তারা।

মুক্তাদিরের সমর্থকরা বলছেন, তাকে ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনটি ধরে রাখা কঠিন হবে।

সদর আসনটি এক অর্থে বিএনপির প্রভাবাধীন বলা যায। স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর নব্বই-পরবর্তী সব কটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বিএনপির প্রার্থী। ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনে আসনটি হাতছাড়া হয় বিএনপির। সেবার অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চুর হাত ধরে আসনটি পায় আওয়ামী লীগ। ২০১০ সালে তিনি মারা গেলে পরের বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জয়ী হন মোক্তাদির চৌধুরী। এটিই তার কোনো সংসদ নির্বাচনে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলেরও প্রথম নির্বাচন ছিল সেটি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আবার জয়ী হন মোক্তাদির, তবে এই নির্বাচন বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ দল বর্জন করেছিল।

এই আসনে আওয়ামী লীগের জোট থেকে সেবার (২০১৪) প্রথমে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে। পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এবারও যদি আসনটি ছাড়তে হয়, তবে সেটি জাতীয় পার্টি পাবে না এটা নিশ্চিত।

তবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মোক্তাদির বা আমিনী- যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক, বিএনপির শ্যামলের বিপক্ষে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে হবে তাকে। এ ক্ষেত্রে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্য ও সংহতি বড় ভূমিকা রাখবে প্রাথীর বিজয়ে। হাসানাত আমিনীর চেয়ে উবায়দুল মোক্তাদিরের মাধ্যমে সেটি সম্ভব বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বকশীগঞ্জে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে নজরুল ইসলাম

সন্ধ্যায় আ.লীগের কার্যনির্বাহী বৈঠক, আলোচনা হবে যেসব বিষয়ে

‘ভারতের কবল থেকে প্রকৃত স্বাধীকারের দাবিতে জনগণ নীরবে প্রস্তুত হচ্ছে’

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ: ঢাকা দক্ষিণের আ.লীগ নেতা রিয়াজকে ফের শোকজ

যুবদল সভাপতি টুকুকে কারাগারে প্রেরণের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ

সরকার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দমনপীড়নের খড়গ নামিয়ে এনেছে: মির্জা ফখরুল

শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আ.লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ: ওবায়দুল কাদের

পথচারীদের মাঝে তৃতীয় দিনের মতো পানি ও স্যালাইন বিতরণ জাপার

মুক্তি দেওয়া হচ্ছে হেফাজতের মামুনুল হককে, আভাস দিলেন নেতারা

গোটা দেশের মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: রিজভী 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :