যারা ব্যাংকিং বোঝে না তাদের বোর্ডে রাখব না: অর্থমন্ত্রী
নানা কেলেঙ্কারির কারণে দেশে এই মুহূর্তে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে দুর্বল জায়গা বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অডিট করবেন। যারা ব্যাংকিং বোঝে না তাদের বোর্ডে রাখবেন না।
বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির একটা পূর্ভাবাসও দেন। বলেন, ‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ থেকে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে। এখন পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ রয়েছে।’
বর্তমানে সবচেয়ে দুর্বল জায়গা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। লিজিং প্রতিষ্ঠান দু-একটা ছাড়া ফোন ধরারও লোক পাওয়া যায় না। এ জন্য প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অডিট করা হবে। এটি কাউকে বিপদে ফেলতে নয়। সচ্ছতার জন্য এটি করা হবে।
যারা ব্যাংকিং বোঝে না তাদের বোর্ডে রাখা হবে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘বোর্ডে যদি একজন অসৎ লোক থাকে তাহলে পুরো ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়। তাই যারা বোঝে না তাদের বোর্ডে রাখব না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি। প্রয়োজনে আরো বলবে। কোনো অবস্থায় তাদের রাখবে না।’
সরকার দুর্নীতি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কাজ করছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের ধরব। তবে আমরা কোনো ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠাব না; যদি তারা স্বীকার করে এবং আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দেয়। আর আসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তারাও রয়েছে, তাদেরও ধরা হবে।’
অর্থমন্ত্রী আবারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে ভবিষ্যতে আর এক টাকাও ঋণ বাড়বে না, বরং কমবে। সেজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের জন্য শ্রেণিকৃত ঋণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমি প্রতিজ্ঞা করেছি এই ঋণ আর বাড়বে না । স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অডিটের ব্যবস্থা করা হবে। এটা আমি কাউকে জেলে পাঠানোর জন্য করতে চাই না। জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য করতে চাই।’
‘আমাদের এই খাতে অনেক অসাধু লোক আছে এবং ভালো লোকও আছে। তবে যারা অসাধু লোকদের চিহ্নিত করে দেন না তারাও অপরাধী বলে বিবেচিত। এখনো পর্যন্ত কেউ আমার কাছে এমন অভিযোগ করেননি যে অমুক ব্যক্তি অসাধু। তাকে এই জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করুন।’ এই জায়গাটায় পরিবর্তন আনা উচিত বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
ব্যাংকে যারা আমানত রাখে তারা দেশের নিম্ন পর্যায়ের মানুষ। মন্ত্রী বলেন, ‘যারা এসব কৃষক, শ্রমিক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের টাকা আত্মসাৎ করে তারা মোটেও ভালো কাজ করে না। তাদের জন্যই আজ ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা কমে গেছে।’ এই খাতে বেশকিছু সংস্কারমুখী পদ্ধতি পদক্ষেপের দরকার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি আস্তে আস্তে সবগুলোই পরিবর্তন করব।’
জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্যাংকটির সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস ছালাম আজাদ। তিনি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরেন। ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও এননটেক্স গ্রুপের ঋণের কারণে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
২০১৮ সাল শেষে জনতা ব্যাংকের আমানত দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। এ সময় ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ৫৩ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। লোকসানি শাখা একটি কমে এখন ৫৬টি।
(ঢাকাটাইমস/১৩ মার্চ/আরএ/মোআ)