রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে সংকট কেন?

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ২২:৪৪ | প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ২২:৩৭
আন্দোলনে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা নয় দফা দাবিতে সোমবার থেকে ধর্মঘট শুরু করেছে৷ ধর্মঘটের কেন্দ্র খুলনা, কারণ সেখানেই সরকারি বড় পাটকলগুলোর অবস্থান৷ শ্রমিকরা ধর্মঘট চলাকালে চার ঘণ্টা করে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধের কর্মসূচিও দিয়েছে৷

দেশে মোট সরকারি পাটকলের সংখ্যা ২৭টি৷ এসব পাটকলে কম করে হলেও প্রায় এক লাখ শ্রমিক কাজ করেন৷ অন্যদিকে সরকারি পাটকল একটি ভর্তুকি খাত৷ লোকসানি এই পাটকলগুলো চালু রাখতে এবং শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন দিতে সরকারকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়৷

তবে শ্রমিকরা মনে করেন, এই ভর্তুকি এবং লোকসানের জন্য তারা দায়ী নন, কারণ, বিশ্বে পাটপণ্যের চাহিদা আবার বাড়লেও সরকারি পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন হচ্ছে না৷ পাটকলগুলো পুরনো মেশিন দিয়ে চলছে, যার ফলে উৎপাদনক্ষমতা শতকরা ৪০ ভাগে নেমে এসেছে৷ আর বিশ্বে পাটের যে আধুনিক পণ্যের চাহিদা, তা বাংলাদেশের সরকারি পাটকলে উৎপাদনের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না৷ অথচ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বেসরকারি পাটকলগুলো ব্যবসা করছে৷

পাটকল শ্রমিকদের প্রধান দাবি হলো, ২০১৫ সালের বেতন বোর্ড বাস্তবায়ন৷ আর তা বাস্তবায়ন হলে শ্রমিকদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে৷

১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল টানা ৯৬ ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন ও এই সময়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা রাজপথ-রেলপথ অবরোধের এই কর্মসূচির পর শ্রমিকরা আরও ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়েছেন৷ সেই কর্মসূচির অংশ অনুযায়ী, ২৫ এপ্রিল প্রত্যেক মিলে শ্রমিক সভা হবে৷ ২৭, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল আবার টানা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট এবং প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ৷

তাদের নয় দফা দাবি নিয়ে গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হলেও তা সফল হয়নি৷ এর আগে শ্রমিকরা একই দাবিতে ২, ৩ ও ৪ এপ্রিল দেশের সব সরকারি পাটকলে টানা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট ও চার ঘণ্টা করে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন৷

শ্রমিকদের নয় দফা দাবির মধ্যে জাতীয় মজুরি কমিশন-২০১৫-র রোয়েদাদ বাস্তবায়ন, পাটক্রয়ে অর্থবরাদ্দ, অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী করা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া পরিশোধ, শ্রমিকদের প্রতি সপ্তাহে মজুরি প্রতি সপ্তাহে পরিশোধ, বকেয়া মজুরি প্রদান অন্যতম৷

রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিক (সিবিএ নন-সিবিএ) ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান খুলনা থেকে ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে বলেন, ‘মজুরি বোর্ড ২০১৬ সালে বাস্তবায়ন হলেও আমাদের সরকারি পাটকলে হয়নি৷ এটা ওই সময় থেকেই বাস্তবায়ন করতে হবে৷ শ্রমিকদের ১২ থেকে ১৭ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে৷ তা দিতে হবে৷ উৎপাদন না করে আমাদের বসিয়ে রেখে কম মজুরি দিলে হবে না৷ আমাদের গড় মজুরি দিতে হবে।’

‘পাটকলগুলোতে প্রয়োজনীয় মেশিন নাই৷ কোনো পাটকলে ৩০ ভাগ আছে৷ সর্বোচ্চ আছে ৪০ ভাগ৷ কিন্তু থাকতে হবে শতভাগ৷ তাহলে উৎপাদনও শতভাগ হবে৷ আর এগুলো আধুনিকায়নও করা হয় না৷ পাট না কিনে উৎপাদন বন্ধ রেখে আমাদের বসিয়ে রাখা হয়৷ আমরা এর অবসান চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১১ সালের পর থেকে অস্থায়ী শ্রমিকদের আর স্থায়ী করা হচ্ছে না৷ আমাদের দাবি শূন্য পদের বিপরীতে শ্রমিকদের স্থায়ী করতে হবে৷'

খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিল দেশের বড় জুটমিলগুলোর একটি৷ সেখানে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন৷ এই মিলের প্রধান (প্রকল্প সমন্বয়কারী) গনিজ উদ্দিন মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘শ্রমিকদের যে প্রধান দাবি ২০১৫ সালের মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন, তা এরইমধ্যে অন্যান্য সেক্টর করপোরেশনে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে৷ কিন্তু সরকারি পাটকলে হয়নি৷ এটা বাস্তবায়ন করতে হলে বছরে আরও ১০০ কোটি টাকা বাড়তি লাগবে৷ এখন শ্রমিকরা মাসে গড়ে ১৮ হাজার টাকা করে মজুরি পান৷ মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন হলে তারা প্রায় দ্বিগুণ পাবেন৷ আর এই পুরো টাকাটাই সরকারের ভর্তুকি দিতে হবে বিজেএমসিকে৷ কিন্তু সরকার আর ভর্তুকি দিতে চায় না, কারণ, সরকারি পাটকলের সবগুলোই লোকসানি এবং ভর্তুকি দিয়ে চলছে৷’

‘প্রধানত দু'টি কারণে সরকারি পাটকলগুলো ব্যবসা করতে পারছে না৷ প্রথমত, পাটকলগুলোর যন্ত্রপাতি পুরণো আমলের৷ দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের মানসিকতা৷'

তার মতে, ‘সরকারি পাটকলে গতানুগতিক চট, বস্তা আর সুতা তৈরি হয়৷ কিন্ত আধুনিক যে পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে, তা উৎপাদনের কোনো মেশিন বা ব্যবস্থা নেই সরকারি পাটকলে৷ আর সুতা যা হয় তা-ও নতুন মানের এবং চাহিদার নয়৷ শ্রমিকদের মানসিকতা হলো, তারা সরকারি শ্রমিক, উৎপাদন হোক বা না হোক তারা বেতন পাবেন, লোকসান দেখা তাদের বিষয় নয়৷ শিল্পকে লাভজনক করে যে বেতন নিতে হবে এই মানসিকতা কোনো পক্ষের মধ্যেই নেই৷'

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সরকারি পাটকলগুলো আধুনিকায়ন এবং লাভজনক করার কোনো প্রক্রিয়া এখানো দৃশ্যমান নয়৷'

বিজেএমসি থেকে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি জুটমিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৬৪টি সপ্তাহের বেতন ও মজুরি ৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে৷ এর মধ্যে শুধু শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রয়েছে ৩১ কোটি ১৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা৷ এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে ১২ কোটি ৩৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা৷

আলীম, কার্পেটিং, খালিশপুর ও দৌলতপুর জুটমিলের ছয় সপ্তাহ এবং ক্রিসেন্ট, ইস্টার্ন, প্লাটিনাম, স্টার ও জেজেআই জুটমিলের শ্রমিকদের আট সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে৷

এ নিয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘শ্রমিকদের এই দাবি অর্থের সঙ্গে জড়িত৷ অর্থমন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন৷ তিনি দেশে ফিরলে তাদের দাবি পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত শ্রমিকদের অপেক্ষা করতে হবে৷ তার সিদ্ধান্ত ছাড়া তো আর টাকা দেয়া যাবে না৷'

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সরকার পাটকলগুলোতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে৷ ভর্তুকি অব্যাহত রাখার চিন্তাভাবনা আছে৷'

প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে সরকার দেশের বিভিন্ন খাতের সব শিল্প-কারখানা জাতীয়করণ করে৷ মিলগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয় বিভিন্ন করপোরেশন বা সংস্থাকে৷ বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)-কে পাটকলগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়৷ পাটকলগুলো ধীরে ধীরে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়৷ ক্রমাগত লোকসানের কারণে প্রতিষ্ঠার ৫২ বছরের পর ২০০২ সালের ৩০ জুন বন্ধ করে দেয়া হয় বাংলাদেশে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল৷ –ডয়েচে ভেলে

(ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

ভরিতে এক লাফে ৪৫০২ টাকা বাড়ল সোনার দাম

সোনালী ব্যাংকের বিশেষ পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত

জীবন বীমা কর্পোরেশন ও বিআরবি হসপিটালের মধ্যে কর্পোরেট চুক্তি 

ওয়ালটন হাই-টেক পার্কে কর্পোরেট পেনশন স্কিমের ‘অবহিতকরণ ও উদ্বুদ্ধকরণ’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

জুলাই থেকে স্থায়ী দোকানের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি

ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি উদ্বোধন করলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

খলিলুর রহমান ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান

এনআরবি ব্যাংকের নতুন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন ওমর ফারুক

সিটি ব্যাংক ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মধ্যে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি স্বাক্ষর

চট্টগ্রামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রশিক্ষণ কর্মশালা 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :