আমরা আমাদেরটা করব, বাকিটা কে করবে?

শরিফুল হাসান
  প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট ২০১৯, ২০:৫৩
অ- অ+

নগর‌পিতা আর সরকা‌রের লোকজন তো এতদিন শুধু পাব‌লিক‌রে গা‌লি দি‌লেন, বিশ স্বাস্থ্য সংস্থা তো বল‌ছে ভিন্ন কথা। এতদিন আমরা শুনলাম এডিস মশা বাসাবাড়ি ও আশপাশে জমে থাকা পানিতে বেশি থাকে। কিন্তু বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এডিস মশা সবচেয়ে বেশি থাকে সরকারি পরিবহন পুলে।

‌পু‌লের সারিবদ্ধ গাড়ি, টায়ার ও পরিত্যক্ত টিউব যন্ত্রপাতিতে এডিসের বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে। এর পরপরই এডিস থাকে হাসপাতালের নিচে খোলা জায়গায়, ছাদে, পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রে। এরপর বেশি থাকে পুলিশের পরিবহন পুলে ও আটকের পর পুলিশ যেখানে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন স্তূপ করে রাখে।

এছাড়া বিমানবন্দরের চৌবাচ্চা ও রানওয়ের আশপাশে, পার্ক, নার্সারি, ফোয়ারা, সিভিল ডিপার্টমেন্টের নির্মাণাধীন ভবনে। সরকারি অফিসগুলো এডিসের বিস্তার বেশি। এছাড়া বাসাবাড়ির গ্যারেজে, বাড়ির মূল ফটকের লোহার গেটের ফাঁকে, পরিত্যক্ত কমোডে, বিদ্যুতের তার আটকানোর সরঞ্জামাদিতে মশা ডিম পাড়ে।

সংস্থার ম‌তে, ১৯টি জায়গায় এডিস মশা বেশি পাওয়া গেছে। এগুলো হলো পুরনো টায়ার, লন্ড্রি ট্যাংক, ঢাকনাবিহীন চৌবাচ্চা, ড্রাম বা ব্যারেল, অন্যান্য জলাধার, পোষা প্রাণীর পাত্র, নির্মাণাধীন ভবনের ব্লক, ফেলে রাখা বোতল ও টিনের ক্যান, গাছের ফোকর ও বাঁশ, দেয়ালে ঝুলে থাকা বোতল, পুরনো জুতা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত খেলনা, ছাদে, অঙ্কুরোদগম উদ্ভিদ, বাগান পরিচর্যার জিনিসপত্র, ইটের গর্ত ও অপরিচ্ছন্ন সুইমিং পুল।

এডিস মশা কীভা‌বে মার‌বেন? ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারকে বেশকিছু পরামর্শ দি‌য়ে‌ছেন বিশস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রধান কিটতত্ত্ববিদ ডা. ভূপেন্দর নাগপাল। এসব পরামর্শের সঙ্গে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এডিস নিধন ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ডের মধ্যে বেশ ফারাক লক্ষ করা গেছে।

নাগপাল বল‌ছেন, এডিস থাকে ঘরের কোণে খাট-বিছানার নিচে। দিনের বেলায় এ মশা ঘরের অন্ধকার কোনায়, বিশেষ করে আসবাবপত্রের নিচে ও ঝুলন্ত পোশাকের নিচে থাকতে পছন্দ করে। সাধারণত সূর্যাস্তের পরপরই এবং দুই ঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়ায়। এডিস মশা সর্বোচ্চ ৩-৪ মিটার উড়তে পারে। এজন্য বাড়ির ভেতর দরজা-জানালা বন্ধ করে মশার ওষুধ স্প্রে করতে হবে। খাট, চেয়ার-টেবিল ও বিছানার নিচে ওষুধ ছিটাতে হবে। যেখানে বেশি মানুষ থাকে, সেখানে এডিস মশা বেশি থাকে। সেখানে বেশি কামড়ায়। ড্রেনের মধ্যে ওষুধ ছিটালে মশা মরবে না। ওখানে মশা থাকে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন, শুধু মশার ওষুধ ছিটালেই হবে না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মশার ওষুধ জায়গামতো ছিটাতে হবে। ভি নাগপাল বলেছেন, উড়ন্ত মশা মারতে হলে সূর্যোদের পরপরই এবং সূর্যাস্তের আগে ওষুধ ছিটাতে হবে। ফগিং মেশিনে ছিটানো ওষুধে শুধু উড়ন্ত মশা মরে, লার্ভা ধ্বংস হয় না।

ভি নাগপাল জানান, এডিস মশা খুব অল্প পানিতে (৫ মিলি বা ১ চা চামচ পানি) ডিম পাড়ে যা পানি ছাড়াও প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। লার্ভা ধ্বংসে টেমিফস ১ গ্রাম/১০ লিটার পানিতে খুব কার্যকরী, যা ব্যবহার পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। নির্মাণাধীন ভবনের প্রজননস্থল ধ্বংস করে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব।

সব প‌ড়ে প্রশ্ন জাগ‌ছে, নির্মাণাধীন ভবনের প্রজননস্থল ধ্বংস কর‌বে কে? সরকারি পরিবহন পুল? সেখা‌নে কে প‌রিষ্কার কর‌বে? বিমানবন্দরের চৌবাচ্চা ও রানওয়ের আশপাশে, পার্ক, নার্সারি? আমরা না হয়, আমা‌দের কাজ কর‌বো বাকিটা কে কর‌বে?

লেখক: সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
খুলনায় যৌথ অভিযানে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবাসহ আটক ১
বিএনপির বিরুদ্ধে চিহ্নিত গোষ্ঠী অপপ্রচার চালাচ্ছে: ড্যাব
প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন হচ্ছে সোমবার
জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে : মির্জা ফখরুল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা