দেশীয় পর্যটকেই ভরসা পর্যটন খাত

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৪৮ | প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৩৫
পর্যটকে মুখর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশজুড়ে নজরকাড়া মনভোলানো নৈসর্গিক জায়গার অভাব নেই। তবুও দেশের পর্যটন খাত দেশি পর্যটকদের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিপুল সম্ভাবনার পরও বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বাড়েনি তেমন। এই খাত থকে বিপুল আয়ের সম্ভাবনাও তাই থমকে আছে। এ অবস্থায় বিদেশিদের কাছে টানতে সরকার একটি মহাপরিকল্পনা নিচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বিপুল আয়ের উৎস হয়ে উঠবে পর্যটনশিল্প।

এমন সম্ভাবনার মধ্যেই সারা বিশ্বের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। এ বছর দিবসটির স্লোগান ‘ভবিষ্যতে উন্নয়নে কাজের সুযোগ পর্যটন’। অবকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক প্রচার নেই বলে সম্ভাবনাময় এই খাতটি পিছিয়ে রয়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন পর্যটকদের বেড়ানোর প্রধান আকর্ষণ। ৫০ লাখের বেশি দেশীয় পর্যটক প্রতি মৌসুমে এসব জায়গা ভ্রমণ করেন। পর্যটন খাতের আয়ের সিংহভাগও আসে তাদের ভ্রমণ থেকে।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর বিশ্বের মোট জিডিপির ১০ দশমিক ৪ শতাংশ আসে ভ্রমণ ও পর্যটন খাত থেকে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এ খাতের অবদান ছিল ২ হাজার ৯৩৯ বিলিয়ন ডলার যা সমগ্র অর্থনীতির ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।

কিন্তু ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশে জিডিপিতে এখাতে তেমন অবদান রাখতে পারছে না। বাংলাদেশের জিডিপিতে ২ দশমিক ১০ শতাংশ অবদান রাখছে এই খাত। তবে বিদেশি পর্যটক টানা গেলে দেশের অন্যতম আয়ের উৎস হতে পারে পর্যটনশিল্প।

সরকারি হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে গত আট বছরে ছয় হাজার ৬৯৯ দশমিক ১৬ কোটি টাকা পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে আয় হয়েছে। ২০১৬ সালে পর্যটন খাত থেকে ৮০৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ২০১৫ সালে এক হাজার ১৩৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে এক হাজার ২২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ৯৪৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ৮২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ৬২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ৫৫৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং ২০০৯ সালে ৫৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা আয় হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০১৯ সালে জুলাই পর্যন্ত একলাখ ৮৯ হাজার ৮৯৭ জন পর্যটক বাংলাদেশে ভ্রমণ করেছেন। আর ২০১৮ সালে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৭০৭ জন, ২০১৭ সালে দুই লাখ ৬৫ হাজার ৪৯১ জন, ২০১৬ সালে দুই লাখ ৯ জাহার ৯৫ জন, ২০১৫ সালে একলাখ ৪১ হাজার ৯১৭ ও ২০১৪ সালে এক লাখ ৫৮ হাজার ৯৪৮ জন বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছেন।

তবে তুলনামূলক কম সৌন্দর্য নিয়ে প্রতিবেশি দক্ষিণ এশীয় অন্য রাষ্ট্রগুলি আরও বেশি পর্যটক টানতে পেরেছে। এর মধ্যে শুধু মালদ্বীপ সারাবছরই পর্যটক টানছে। দেশটির আয়ের প্রধান উৎসও পর্যটন খাত।

বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, রয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন, হিমছড়ির ঝর্ণা, ইনানী সমুদ্রসৈকত। এরপরও বিপুল সম্ভাবনাতেই আটকে রয়েছে দেশের পর্যটন।

তবে আশার কথা হলো পর্যটনবান্ধব দেশের তালিকায় চলতি বছর বাংলাদেশ পাঁচ ধাপ এগিয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০১৯ সালের ‘ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভ রিপোর্টে’ ভ্রমণ ও পর্যটনে সেরা দেশগুলোর মধ্যে পাঁচ ধাপ এগিয়ে ১২০তম অবস্থানে রয়েয়ে বাংলাদেশ।

এমন অবস্থায় পর্যটন ঘিরে মহাপরিকল্পনার কথা বলে আসছে সরকার। নেয়া হচ্ছে বড় পদক্ষেপ। তার মধ্যে বেসকারি ট্যুর অপারেটদের জন্য আইন তৈরি করাসহ ট্যুর গাইডলাইন তৈরি, পর্যটন সেক্টরে দক্ষ লোক গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা বেসকারি ট্যুর অপারেটদের জন্য আইন তৈরি করেছি। এটা কেবিনেটে পাঠিয়েছি। ভেটিং হয়ে আসলেই সংসদে পাঠাব।’

তিনি বলেন, ‘দেশের পর্যটনকে এগিয়ে নিতে আমাদের সবার উদ্যোগ প্রয়োজন। এখন সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ আছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।’

পর্যটন খাত ঘিরে মাস্টার প্লান আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে উল্লেখ করে ‘আমরা এরইমধ্যে ফার্ম নির্বাচন করেছি। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ওয়ার্ক অর্ডার দেব তাদের। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ববাসী পজিটিভ ধারণা পোষণ করেন।’

‘দেশের ট্যুরিজমকে প্রমোট করার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের ঐতিহ্য দেখে যেন পর্যটকরা মুগ্ধ হয় সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’

সরকারি বরাদ্দ বেড়েছে পর্যটন খাতে

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ও উন্নয়ন খাতে দ্বিগুণেরও বেশি বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও নতুন অর্থবছরে (২০১৯-২০) জন্য তা বাড়িয়ে ৩ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। এতে করে পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে এই খাত জিডিপিতে অবদান রাখার পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/জেআর/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :