টানা ধর্মঘটে রাজশাহীর দর্জিরা

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:২৩

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে টানা ধর্মঘটে নেমেছেন রাজশাহী মহানগরীর দর্জিরা। গত ১০ দিন ধরে তারা কোনো কাজ করছেন না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। তারা নতুন পোশাক বানাতে পারছেন না। আবার যারা আগেই পোশাক বানাতে দিয়েছেন তারাও ডেলিভেরি পাচ্ছেন না।

দর্জিরা জানান, তারা কাজ করেন মালিকের দোকানে। কাজের বিনিময়ে মালিক তাদের মজুরি দিয়ে থাকেন। তারা মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু মালিকপক্ষ তা মানতে নারাজ। তাই দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। এ জন্য রাজশাহী দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের আওতাভুক্ত ২৩০ জন দর্জি গত ১ নভেম্বর থেকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন।

সরেজমিনে নগরীর সাহেববাজার, নিউমার্কেট হকার্স মার্কেট, গণকপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ দর্জির দোকান বন্ধ। কিছু কিছু খোলা থাকলেও কাজ হচ্ছে না। মালিক একাই বসে আছেন। মালিকদের মধ্যে যারা কাজ জানেন তারা গ্রাহকের চাপে পুরনো কাজগুলো করছেন। কিন্তু নতুন কোনো অর্ডার নেয়া হচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ।

রাজশাহী দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ভোলানাথ বলেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। চুক্তিপত্রের ৬ নম্বরে স্পষ্ট করে বলা আছে, প্রতি দুই বছর পরপর মুজুরি বৃদ্ধি করার কথা। দুই বছর পর প্যান্ট প্রতি ৩০ টাকা, শার্ট ২০ টাকা, স্যুট ১০০ টাকা, সেরোয়ানি ১৫০ টাকা, সাফারি ৬০ টাকা, ওয়েস কোট ৬০ টাকা ও পাঞ্জাবি ৩০ টাকা করে বাড়ানো হবে। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। বারবার মৌখিকভাবে মজুরি বৃদ্ধির অনুরোধ করা হলেও আমাদের কথা শোনা হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ধর্মঘটে নেমেছি।

সাধারণ সম্পাদক আমজাদ আলী রসুল বলেন, গত ১৭ অক্টোবর আমাদের পুরোনো চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর ১৮ তারিখে আমরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিসহ নতুন চুক্তি করার জন্য নোটিশ পাঠাই। কিন্তু তারপর মালিকপক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, এটা তারা মানতে রাজি নন। তাই আমরা ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য হয়েছি। মজুরি বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

তবে দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি মানতে নারাজ রাজশাহী মহানগর দর্জি দোকান মালিক সমিতি। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, তারা এই দাবি এবার মানবেন না। আবার দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ী তাদের দাবি মানা না হলে তারা কাজে বসবেন না। একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আনছে এ দুই সংগঠন।

দর্জি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, রাজশাহীর দর্জিরা ঢাকার চেয়েও বেশি মজুরি পান। তারা প্যান্ট প্রতি ২০০ টাকা, শার্টে ১৫০ টাকা, স্যুট ৮৫০ টাকা, ওয়াসা কোটে ৩৫০ টাকা ও পাঞ্জাবি প্রতি ১৫০ টাকা করে পেয়ে থাকেন। তবে এই তথ্যকে মিথ্যা বলে অভিযোগ করছে দর্জি শ্রমিক ইউনিয়ন। তারা বলছেন, মালিক সমিতি যে পরিমাণ মজুরি হিসাব দিচ্ছেন দর্জিরা তা পান না। এই মুহূর্তে তারা প্যান্ট প্রতি ১৬৯ টাকা, শার্ট ১০৮ টাকা, স্যুট ৮০০ টাকা, ওয়াসা কোট ৩০০ টাকা ও পাঞ্জাবি প্রতি ১৩০ টাকা করে পেয়ে থাকেন।

দর্জিদের মজুরি বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর দর্জি দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মনজুর আহমেদ বলেন, প্রতি দুই বছর পরপর মজুরি বৃদ্ধির যে চুক্তি করা হয়েছিল সেটা অনেক আগে করা। যখন চুক্তি করা হয়েছিল তখন তো বোঝা যায় না ফলাফল কেমন হবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি। এভাবে প্রতি দুই বছর পরপর মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয়।

সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন চুমকু সভাপতির সাথে একমত পোষণ করে বলেন, এবার কিছুতেই মজুরি বাড়ানো হবে না। এটা আমাদের মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমরা বারবার বলছি, এখন ব্যবসা খারাপ চলছে। পরেরবার বাড়ানো হবে। কিন্তু তারা আমাদের কথা না মেনে অযৌক্তিভাবে ধর্মঘট করে যাচ্ছেন। এতে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :