জেএমবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান আমির আবু রায়হান মাহমুদ ওরফে আব্দুল হাদীকে দুই সহযোগী এবং বিপুল বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার রাতে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় ১৫০টি বিস্ফোরক ডেটোনেটর, ‘জিহাদি’ বই, একটি কমান্ডো ছুরি ও ২০ পিস জেল জাতীয় বিস্ফোরক।
এসময় জেএমবির দুই সদস্য হাবিবুর রহমান চাঁন মিয়া ও রাজিবুর রহমান রাজিব ওরফে সাগরকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল বলেন, ‘পুরাতন জঙ্গিরা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। এজন্য চট্টগ্রাম এলাকায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ থেকে এই জঙ্গিদের কাছে অর্থ আসত। এছাড়া ডাকাতি ও ছিনতাই থেকেও তাদের দলের অর্থ যোগান হতো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।’
‘ময়মনসিংহ ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে পালিয়ে যাওয়া সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানির সঙ্গে জেএমবির বর্তমান আমির আবু রায়হান ওরফে হাদীর সরাসরি যোগাযোগ ছিল। কারণ প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি সালাউদ্দিনের বোনকে বিয়ে করেন।’
হলি আর্টিজানের রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতার তথ্য নেই
আগামী ২৭ নভেম্বর হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতার তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট প্রধান। বলেন, সেখানে হামলায় পাঁচজন জঙ্গি অংশগ্রহণ করেছিল। তারা সবাই নিহত হয়েছে। পাশাপাশি তাদের যারা নেতা ছিলেন তাদের মধ্যে প্রায় অনেকেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা গেছে। তারপরও কোনো ধরনের নাশকতা যেন না ঘটাতে পারে সেই লক্ষে আমাদের গোয়েন্দা টিম কাজ করছে। আদালতে রায়কে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার জঙ্গিদের নাশকতার কোনো পরিকল্পনা করছিল কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিরা সক্রিয়
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গিদের ছোট ছোট সেলগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকটিভ (সক্রিয়) রয়েছে। সেগুলোর ওপর আমাদের নজরদারি রয়েছে। জেএমবি সদস্যদের মাঝে এখনো বিস্ফোরক বানাতে পারে এমন সদস্য সক্রিয় আছে। তাদেরকে ধরার জন্য আমরা কাজ করে যাছি।’
যেভাবে জঙ্গিবাদে রায়হান ওরফে হাদী
টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতেন জঙ্গি নেতা আবু রায়হান ওরফে হাদী। ২০১০ সালে ডা. নজরুল ইসলাম এবং তালহা (তারা দুজনই মারা গেছেন) নামে দুজনের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগ দেন। সংগঠনের প্রতি একাত্মতা এবং বিশ্বস্ততার কারণে ২০১২ সালে সংগঠনের সিদ্ধান্তে তিনি কক্সবাজারে গিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি সংগঠনের দাওয়াতি শাখার প্রধান হন। সে সময় তালহা প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য হাদীকে এক ব্যাগ কমান্ডো ছুরি দেন। এরপর সেখানে মাদ্রাসা তৈরি জন্য জায়গা কেনেন। আসলে মাদ্রাসার আড়ালে জঙ্গি প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা ছিল তার।
গ্রেপ্তার অপর দুই জঙ্গির মধ্যে জেএমবির ইসাবা গ্রুপের প্রধান হিসেবে সংগঠন পরিচালনার অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করেন। গত বছরের মার্চে রাজধানীর দক্ষিণখানে পীর সাহেবের বাড়িতে ডাকাতির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন হাবিবুর রহমান চাঁন মিয়া। কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়েছেন।
(ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/এসএস/জেবি)

মন্তব্য করুন