যেমন কাটছে ‘লকডাউন’ শিবচরের প্রথম দিন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার তিনটি এলাকা আজ থেকে লকডাউন করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। উপজেলার শিবরাকান্দি, বহেরাতলা এবং চর বাঁচামারা গ্রামে একাধিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ায় সেখানে বেড়াতে আসা প্রবাসীদের সেইসঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীদের বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকানপাট ছাড়া উপজেলার সব ধরনের রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান বা এমন কোনো স্থান যেখানে মানুষের সমাগম হতে পারে সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান ঝেলা প্রশাসক। এ ছাড়া শিবচরের ভেতরে গণপরিবহনের চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক এবং এলাকাবাসীও জানিয়েছেন যে, শুক্রবার সকাল থেকে গোটা শিবচরে মানুষের চলাচল ছিল অনেক সীমিত। প্রয়োজনীয় বাজার করা ছাড়া কেউ সেভাবে বের হতে দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্মী।
ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, শিবচরের ওই এলাকাগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায়, সেখানে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছি। সেখানকার আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই ভাইরাস ছড়াতে পারে তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য বাধ্য করছি। লকডাউন করা ছাড়া পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব।’
শিবচরের পাঁচচর ইউনিয়নের গোয়ালকান্দা গ্রামের বাসিন্দা সালমা বেগম আগে কখনও তার এলাকায় এতো থমথমে পরিবেশ দেখেননি।
‘শিবচরে মানুষ খুব কম চলাফেরা করতেসে। গাড়িঘোড়া চলতেসে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাইরায়না। এরকম একটা ঘটনা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে। পোলাপানের স্কুল মাদ্রাসা বন্ধ হয়া গেসে। ওদেরে বাইরে খেলতে দেইনা’ বলছিলেন তিনি।
জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, কাশি শিষ্টাচার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেটা মাইকিং করে, লিফলেট বিতরণ করে, পোস্টার টানিয়ে এবং মসজিদের ইমামের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
তবে করোনাভাইরাস যদি পুরো কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে পুরো এলাকা লকডাউন করার বিধান আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকৌশলে।
বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, প্রয়োজন হলে তিনি পুরো উপজেলা লকডাউনের সিদ্ধান্ত দেবেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, আজকে জুমার নামাজের বয়ানে আমরা প্রচারণা করছি যে, মানুষ যেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তৎপর থাকেন। কারও হাঁচি কাশি-জ্বর থাকলে বা খুব বয়স্ক ব্যক্তি হলে তারা যেন বাসায় নামাজ আদায় করেন, জামাতে না আসেন। এছাড়া সভা সমাবেশ, ভিড় ভাট্টা, কোচিং, ধর্মীয় সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলার আসর ইত্যাদি বন্ধ করেছি।
গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লকডাউনের সিদ্ধান্ত আসার পর সেটা শিবচরের বাস মালিকদের গণপরিবহন বন্ধ রাখতে ও বণিক সমিতিকে দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে পেরে কেউ এতে কোন আপত্তি করেনি বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুদ্দিন খান।
রাস্তাঘাটে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
তাদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ করার কথাও জানান মি. খান।
তিনি বলেন, ইতালি, ফ্রান্সসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে গত একমাসে ৬১৩ জন প্রবাসী এখানে এসেছেন। আমরা স্থানীয় মানুষের সহায়তায় তাদেরকে খুব নজরদারিতে রেখেছি। বিশেষ করে গত দুই সপ্তাহে যারা এসেছেন। কারণ অনেকে আসার পর কাউকে জানায় না। লুকায়া থাকে। তখন আমরা তাদেরকে খুঁজে বের করে বলি যে তারা যেন ঘরের বাইরে না যায়। লক্ষণ দেখা গেলে যেন জানায়।
‘ইতিমধ্যে আমরা প্রবাসী কয়েকজনের মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখে তিনি তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের মধ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন আছেন’ জানান মি. খান।–বিবিসি বাংলা
(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/জেবি)

মন্তব্য করুন