প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক রকেটে মহাকাশ যাত্রা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২০, ১৮:১৩
অ- অ+

টেক বিলিয়নেয়ার এলন মাস্কের মালিকানাধীন বেসরকারি রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স নাসার দুই নভোচারীকে কক্ষপথে পাঠিয়েছে। দুই নভোচারী ডগ হার্লি এবং বব বেনকেন শুধু নতুন একটি ক্যাপসুল ব্যবস্থাই পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছেন না বরং তারা নাসার জন্য নতুন একটি ব্যবসায়িক মডেলের সূচনা করেছেন।

আশা করা হচ্ছে যে, স্পেসএক্স কোম্পানিটি বাজার প্রসারিত করবে। এরিমধ্যে এরোস্পেস জায়ান্ট বোয়িং এ কাজটির জন্য নাসার সাথে চুক্তি করেছে। মাস্ক বলেছেন যে, তার যন্ত্র নভোচারীদেরকে কক্ষপথে নিয়ে যাচ্ছে, এটা দেখে তিনি আবেগাপ্লুত।

তার কথায়, আমার মনে হয় এটা এমন একটা কাজ যা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে, বিশেষ করে তাদের যাদের অনুসন্ধানী আত্মা রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে এমন অনুসন্ধানী আত্মাদের সূতিকাগার।

স্পেসএক্সের নতুন এই সক্ষমতা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কর্মী পরিবহনে রাশিয়ার রকেট এবং ক্যাপসুলের উপর নাসার নির্ভরতা কমাবে।

এই বিষয়টিকেই গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি উৎক্ষেপণ দেখতে ফ্লোরিডায় গিয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেন, 'কক্ষপথে আমাদের নভোচারীদের পৌঁছাতে অন্য দেশের দয়ার উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন অতীতের নেতারা। কিন্তু আর নয়। আজ আমরা আরেকবার আমেরিকান নভোচারীদের আমেরিকার রকেটে করে পাঠাচ্ছি- যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভাল- ঠিক এখানে আমেরিকার মাটি থেকেই পাঠানো হচ্ছে।'

হার্লি এবং বেনকেন যে যানটিতে করে মহাকাশে গেলেন সেই ড্রাগনকে নিয়ে ঠিক সময়েই ভূ-পৃষ্ঠ ত্যাগ করে ফ্যালকন-৯ রকেট। আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন যে, ফ্লোরিডার কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উড্ডয়নের সময় অনুকূল অবস্থা বজায় থাকার সম্ভাবনা ৫০-৫০। কিন্তু ভাগ্য সহায় থাকায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকার সুযোগটি লুফে নেয় স্পেসএক্স কন্ট্রোলাররা।

মহাকাশ স্টেশনের বিখ্যাত ৩৯-এ প্যাড থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে আটলান্টিকের দিকে উড্ডয়ন করে। আড়াই মিনিট পর মহাকাশ যানটির নিচের অংশ আলাদা হয়ে সাগরে থাকা একটি ড্রোন জাহাজে অবতরণ করে। আর এর মাত্র ছয় মিনিট পর আরোহীরা নিরাপদে কক্ষপথে প্রবেশ করে।

হার্লি এবং বেনকেনের রোববার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এর মাঝে তারা ক্যাপসুলে থাকা কিছু যন্ত্রপাতি এবং প্রক্রিয়া পরীক্ষা করে দেখবেন। যার মধ্যে কিছু ফ্লাইং ম্যানুয়ালও রয়েছে।

যদিও ড্রাগন ক্যাপসুলটি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় এবং এটি নিজে নিজেই পথ খুঁজে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাতে সক্ষম, তবুও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে তৈরি থাকতে এটি কিভাবে হাতে চালানো যাবে সেটি জানাটাও জরুরি। বিশেষ করে ড্রাগনে কোন কন্ট্রোল স্টিক নেই; সব ধরনের উড্ডয়নের নির্দেশনা একটি টাচস্ক্রিন প্যানেলের মাধ্যমে দিতে হবে।

কক্ষপথে তাদের প্রথম কাজটি হবে তাদের মহাকাশযানটির একটি নাম দেয়া- মঙ্গল যাত্রা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের মহাকাশচারীদের ঐতিহ্য অনুযায়ী এই রীতি চলে আসছে। পৃথিবীতে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে এর নাম 'এনডেভার' বলে ঘোষণা করা হবে।

ডগ হার্লি বলেন, 'বেশ কিছু কারণেই আমরা এনডেভার নামটি বাছাই করেছি। প্রথমত ২০১১ সালের পর শাটল কর্মসূচী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নাসা, স্পেসএক্স এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে যে অভিনব প্রয়াস দিয়েছে সেটি একটি কারণ। আরেকটি কারণ আমার এবং ববের কিছুটা ব্যক্তিগত। আমরা দু'জনেই আমাদের প্রথম ফ্লাইটটি শাটল এনডেভারে করেছিলাম। যার কারণে এটিকেই আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।'

১৮শ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ পরিব্রাজক জেমস কুক অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে তার যাত্রাটি এনডেভার নামে একটি জাহাজেই করেছিলেন। হার্লি এবং বেনকেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কতদিন থাকবেন সেটি এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে এক থেকে চার মাসের মতো তারা সেখানে থাকবেন।

আশা করা হচ্ছে যে আটলান্টিকে তাদের ফিরে আসাটাও উড্ডয়নের মতোই ঝামেলাহীন হবে এবং সেটি নিশ্চিত করতে নাসা ও স্পেসএক্স একযোগে কাজ করবে।

আইএসএস এ ছয়টি অভিযানের মাধ্যমে ক্রু পৌঁছানোর বিষয়ে কোম্পানিটির সাথে নাসার ২.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি রয়েছে। এগুলোর প্রথমটি আগস্টের শেষের দিকে বা তার পর পরই শুরু হবে। তখন একটি ড্রাগনে করে দুই জনের পরিবর্তে চারজন করে আরোহী থাকবে।

ঢাকা টাইমস/৩১মে/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সিরাজগঞ্জে সরকারি অফিস ‘দখল করে’ জামায়াতের কার্যালয়ে
গণবিরোধিতার কারণে বিশেষ গোষ্ঠীকে দেশের মানুষ অনেক আগেই হলুদ কার্ড দেখিয়েছে: সেলিম উদ্দিন 
চিলড্রেন্স পার্টি কথাবার্তা শুনে আমাদের বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই: মির্জা আব্বাস 
খুলনায় ট্রেন-ট্রাক সংঘর্ষ, রেল যোগাযোগ বন্ধ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা