পানি নিষ্কাশনের অভাবে ফসল উৎপাদন ব্যাহত

অরিন্দম মাহমুদ, ধামইরহাট (নওগাঁ)
  প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৪০| আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৫০
অ- অ+

নওগাঁর ধামইরহাটে শত শত বিঘা তিন ফসলি কৃষি জমির ফসল পানি নিষ্কাশনের অভাবে এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় জমিগুলো প্রায় কয়েক বছর ধরে পানির নিচে তলিয়ে থাকে। ফলে ওই এলাকার কৃষকরা বর্ষা মৌসুমে কোনো ফসল উৎপাদন করতে পারেন না।

তবে শত কষ্টের পরও ওইসব জমিতে কৃষকরা ধান, রসুন, পেঁয়াজ, আলু, পটল, করলার চারা রোপণ করে থাকলেও একটু বৃষ্টি বা বর্ষার পানিতে তলিয়ে গিয়ে তাদের চারাগুলো পচে নষ্ট হয়ে যায়। টানা বৃষ্টিপাতে জমিগুলোতে পানি জমে থাকায় রোপণ করা ধানের চারাগুলো পচে নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে, এবারে উপজেলায় ১৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও টানা বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২৩ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

অন্যদিকে আর কিছুদিন পরেই কৃষকের ঘরে নতুন ধান উঠতে শুরু করবে কিন্তু ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে চলছে চাপা আর্তনাদ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর মহিষগাড়ি বাঁধের পূর্বপাশে রাঙালঘাট, মহিষপুর, মানপুর এলাকায় প্রায় চারশ বিঘা জমির ফসল দীর্ঘ সময় পানিতে তলিয়ে থাকায় পচে নষ্ট হয়ে গেছে। নদীর পশ্চিম পাড়ের চর এলাকায়ও শত শত বিঘা জমির ফসল পানি নিষ্কাশনের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। উঁচু কিছু জমির ফসল ঘরে তুলতে পাওয়ার আশা থাকলেও নিচু জমিগুলোর ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ওই ইউনিয়নে টানা বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে ৭৪ হেক্টর জমির ধান ও তিন হেক্টর জমির রবিশস্য চলতি মৌসুমে নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষকদের দাবি, নদীর বাঁধ নির্মাণের পর থেকে পানি নিষ্কাশনের অভাবে তাদের ফসল প্রতি বছরে এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাঁধে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলে ওইসব জমির ফসল রক্ষা পাবে এমনটা মনে করছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

ধামইরহাটের ইসবপুর ইউনিয়নের কৃষকরা জানিয়েছেন, পানির নিচে পড়ে থাকা জমির ফসলগুলো রক্ষার্থে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট রাঙ্গালঘাট এলাকার মহিষগাড়ি বাঁধে পানি নিষ্কাশনের জন্য চ্যানেল, ব্রিজ অথবা কালভার্ট নির্মাণ এবং পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর হরিপুর ব্রিজ থেকে জাবারপুর ঘাট পর্যন্ত নদী পুনঃখননের দাবি জানান তারা।

রাঙ্গালঘাট এলাকার কৃষক জাইদুল ইসলাম বলেন, বাঁধের পূর্বপাশে আমার পরিবারের প্রায় পাঁচ বিঘা ফসলি জমি আছে। তার মধ্যে আমার নিজস্ব ৪৯ শতাংশ জমিতে আমি প্রতি বছরে ধানসহ রবিশস্য লাগিয়ে থাকি। তা থেকে বছরে আমার ২০-২৫ হাজার খরচ বাদে আয় হতো। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের অভাবে কয়েক বছর থেকে আমি ফসল ঘরে তুলতেই পারিনি।’

কৃষক দেলোয়ার হোসেন সরদার বলেন, ‘আমি ১০ বিঘা সম্পত্তি বহু বছর আগে ক্রয় করেছি। কিন্তু মহিষগাড়ি বাঁধ নির্মাণের পর থেকে আমার সম্পূর্ণ জমির ফসল বর্ষা মৌসুম এলেই পানিতে তলিয়ে যায়। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে ফসল পানির নিচে থাকায় সব জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে। এবারও আমার ১০ বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে থাকায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে ইসবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েশ বাদল বলেন, ‘গত মাসে উপজেলা পর্যায়ে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে আমরা ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গনপতি রায় জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁ জেলা শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের জন্য লিখিতভাবে ফর্মুলা অনুসরণ করলে আমরা বিষয়টি দেখব। এছাড়া আমার এ বিষয়ে জানা ছিল না। আমি আমার লোকজন ওই এলাকায় পাঠিয়ে দেব। বিষয়টি কি পর্যায়ে আছে তা দেখার পর একটি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৯নভেম্বর/পিএল)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নোয়াখালীতে বন্দুকসহ মাদক কারবারি আটক 
যেভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী মুখ হয়ে ওঠেন আন্দালিব পার্থ
কলাবাগানে ৪০ কেজি গাঁজাসহ কারবারি গ্রেপ্তার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দৃষ্টিনন্দন-পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক শাটল গাড়ির যাত্রা শুরু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা