পদ্মা সেতু হয়ে গেলে জীবন মানের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে

মো. রশিদুর রহমান
 | প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:৪২

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিশ্চয় প্রশংসার দাবি রাখে। এই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা বাস্তবে রুপ নিবে। সাথে সাথে তাদের জীবনধারণের মানের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হবে।

কিন্তু এই পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান হওয়া নিয়ে যে পলিটিক্যাল ইকোনমির বয়ান শুরু হয়েছিল তা সহজেই চোখে পড়ে। তা এখনও জারি আছে। তবে মনে রাখা দরকার যে, এটা বাংলাদেশের উন্নয়নের এক চলমান প্রক্রিয়া এবং আশা করি তা অব্যাহত থাকবে।

১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু চালু করা হয়েছিল। নির্মাণকালে ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েও এই সেতুটি বিশ্বের ১১তম দীর্ঘতম সেতুর স্থান দখল করেছিল। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ হওয়ায় উত্তরবঙ্গের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটে। সাথে পণ্য পরিবহনেও গতি আসে।

বঙ্গবন্ধু সেতু যখন উদ্বোধন করা হয় তখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়তাম। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সেতুটির উদ্বোধন দেখেছিলাম। এই সেতুটির একাংশ আমার জন্মভূমি জেলা টাঙ্গাইলের একাংশে হওয়ায় আমাদের মধ্যে একধরনের ভালো লাগা কাজ করত। পাশাপাশি এই সেতু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো টাঙ্গাইলে রেলপথ চালু হয়েছিল।

আমি সঠিকভাবে জানি না আমাদের নীতি নির্ধারকরা কীভাবে পরিকল্পনা করেন এবং কীভাবে তার বাস্তবায়ন করেন। তবে আমার মতে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ হওয়ার দশ বছরের মধ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা দরকার ছিল। ২০০৮ সালে এই সেতু নির্মাণ হলে তা বাংলাদেশের উন্নয়নে আরো বেশি অবদান রাখতে পারত।

যারা ফেরিতে বা লঞ্চে করে যমুনা বা পদ্মা নদী পাড়ি দেয়নি তারা হয়তো ধারণা করতে পারবে না কীভাবে ঐসকল অঞ্চলের বাসিন্দারা চলাচল করে। আমি পাঁচ বছর বয়সে কয়েকবার লঞ্চে করে যমুনা নদী পাড়ি দিয়েছিলাম। আর ২৯ বছর বয়সে লঞ্চে করে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়েছিলাম।

যবিপ্রবিতে যোগদান করার পর আমি প্রায়ই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে ঢাকা-যশোর-ঢাকা যাতায়াত করেছি। একজন ভুক্তভোগী হয়ে আমি জানি ফেরি দিয়ে পারাপার হওয়া কতটা পীড়াদায়ক হতে পারে। যে যাত্রা ছয় ঘণ্টায় সম্ভব ছিল তা আমি কয়েকবার ১২-১৬ ঘণ্টায় শেষ করতে পারিনি।

একবার আমার স্ত্রীকে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য বিদায় দিয়ে যশোরের উদ্দেশে বাসে করে রওয়ানা দিয়েছিলাম। সে আমার আগে ব্রিসবেনে পৌঁছে গিয়েছিল। আশা করি পদ্মা সেতুর কাজ সম্পূর্ণ হলে হয়তো পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ব্যবহার না করেই অল্প সময়ে বাস বা ট্রেনে করে যশোরে যেতে পারব।

আমরা আরো বেশি গর্ব করতে পারতাম যদি নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি আমাদের দেশীয় প্রকৌশলীরা নকশা প্রণয়ন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা কাজের তদারকি করতে পারত। দেশেই পদ্মা সেতুর স্প্যান তৈরি করা গেলে চীন থেকে জাহাজে করে বাংলাদেশে নিয়ে আসার দরকার পড়ত না। ফলে ব্যয় অনেক কমে যেত!

লেখক: পিএইচডি গবেষক, কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকাটাইমস/২জানুয়ারি/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :