মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও দুশ্চিন্তা প্রশান্তর পরিবারে

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও
  প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল ২০২১, ১২:৪০| আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২১, ১৩:০৭
অ- অ+

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রশান্ত দেবনাথ নামে এক শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও কঠোর অধ্যবসায় দিয়ে ইতোমধ্যে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এতে এলাকার মানুষ তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। কিন্তু পরিবারের লোকজন রয়েছে চরম হতাশায়। কারণ মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও নিয়মিত খরচ চালানোর ক্ষমতা নেই তার ফেরিওয়ালা বাবার।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়নের কেশুরবাড়ি গ্রামের দিনমজুর বির্ষম দেবনাথের ছেলে প্রশান্ত দেবনাথ। বাবা মায়ের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় প্রশান্ত।

নিজের মনোবল, কঠোর অধ্যবসায় দিয়ে সে এবার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে হতদরিদ্র দিনমুজুরের ছেলে প্রশান্ত। ভর্তি পরীক্ষায় সে ১০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৬৮ দশমিক ২৫ নম্বর।

বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে এলাকার মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশান্ত। তার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে এলাকার নারী পুরুষ সবাই খুশি। ছুটছেন তাকে একনজর দেখার জন্য।

তার এই সাফল্যে এলাকায় সব শ্রেণির মানুষের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। কিন্তু আনন্দের মাঝেও বাবা-মায়ের মনে বাসা বেঁধেছে অজানা কষ্ট।

প্রশান্তের মা দ্বিপি রানী দেবনাথ বলেন, ছেলেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে কত টাকা লাগবে জানি না। লোকমুখে শুনেছি ভর্তি হতে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা আমরা গরিব মানুষ কোথায় পাব?

তিনি বলেন, একসময় আমরা তাঁতের কাজ করতাম। কিন্তু লোকসান গুনতে গুনতে পুঁজি হারিয়ে ফেলেছি। এখন ওর বাবা গ্রামে ফেরি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে। কলেজে ভর্তির খরচ কিভাবে বহন করব এই চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছি।

প্রশান্ত দেবনাথ বলেন, ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল ভালো কলেজে লেখাপড়া করার। এজন্য নিরলস পরিশ্রম করে গেছি। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানানোর। তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য রাতদিন ১৮-২০ ঘণ্টা লেখাপড়া করেছি। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। অনেক সময় আমি না খেয়ে অনেক দিন কাটিয়েছি। যেখানে খাওয়ার টাকা দিতে পরিবারের কষ্ট হতো সেখানে প্রাইভেট পড়ার টাকাও দিতে পারত না।

কলেজের শিক্ষকরা আমার পারিবারিক কষ্টের কথা জেনে অনেকে আমাকে সাহায্য করেছেন। আমার মামার অবদান ভুলার নয়। গত বছর করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস করার মতো আমার ল্যাপটপ বা মোবাইল ছিল না। আমার মামা আমাকে ফোন কিনে দিয়ে সাহায্য করেছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রভাত কুমার সিংহ বলেন, আমার এলাকার একজন দিনমজুরের ছেলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে জেনে আমরা সবাই পুলকিত। সে আমাদের বড়গাঁও ইউনিয়নবাসীর গর্ব। তার লেখাপড়ার খরচ চালাতে প্রশাসনের পাশাপাশি এলাকার ধনাঢ্য লোকজনকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।

জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলার বেশকিছু শিক্ষার্থী এবার সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আমরা মনে করি, যারা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে তারা জেলার সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। অনেক দুঃস্থ অসহায় ও অসচ্ছল পরিবারের সন্তানও এবার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে তাদের মেধার জোরে।

জেলা প্রশাসক বলেন, যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত, অসচ্ছল পরিবার থেকে এসেছে তাদেরকে ভর্তির বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য জেলা প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে আছে। যাদের ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন, তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নির্বাচিত হলে স্থানীয় সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আমিনুল হকের
মিলন-জাদুর ঝলক কি দেখা যাবে আবার?
সরকারবিরোধী মিছিলের চেষ্টা: শ্যামপুরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার
রুপগঞ্জে সমকামী সম্পর্কের জটিলতায় রুমমেটকে খুন, অতঃপর গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা