শফিক রেহমান কি পলাতক, কোথায় আছেন তিনি?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১২:৫৯| আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৩৫
অ- অ+

প্রায় বছর চারেক ধরে কোনো সাড়া-শব্দ নেই দেশের একসময়ের আলোচিত প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানের। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার যড়যন্ত্রের অভিযোগে আটক হয়ে জামিনে মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পর থেকে লাপাত্তা বিএনপি-ঘনিষ্ঠ এই সাংবাদিক। তিনি এখন কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন?

তার বিরুদ্ধে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার যড়যন্ত্রের মামলাটি কোন পর্যায়ে আছে? এ মামলায় জামিন নেওয়ার পর আর কোথাও নেই তিনি, তবে কি শফিক রেহমান পলাতক? এসব বিষয়ে দৈনিক ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন শফিক রেহমানের দুজন আইনজীবী।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান আসাদের তথ্যমতে বর্তমানে শফিক রেহমান ব্রিটেনে অবস্থান করছেন। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি দেশেই ছিলেন। কিছুদিন পর চলে যান ব্রিটেনে।

ঢাকা টাইমসকে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘উনি ব্রিটেনের সিটিজেন। আমি ওনার মামলায় হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আইনি সহায়তা করেছি। হাইকোর্ট এ মামলায় তাকে জামিন দেয়নি। পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে তিন মাসের জামিন দেন।’

পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে শফিক রেহমানকে জামিন দিয়েছিল আদালত। আইনজীবী বলেন, পুলিশ তার পাসপোর্ট জব্দ করেছিল। শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে শুধু এই একটি মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এই মামলার শুরু থেকে জজ কোর্টে শফিক রেহমানের পক্ষে কাজ করছেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। মামলাটি কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, শফিক রেহমানকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। যখন চার্জ গঠন করা হয়, তখন তিনি দেশে ছিলেন না। চার্জগঠন শেষে মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।’

চার্জের বিরুদ্ধে তারা কোনো আইনি পদক্ষেপ নেননি। কেননা আসামির উপস্থিতি ছাড়া চার্জের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। এ ছাড়া করোনার কারণে এই মামলার বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানান আইনজীবী।

জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘এ মামলার শুনানি হচ্ছে না। শফিক রেহমানও ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি ব্রিটেনে আছেন। আইনের দৃষ্টিতে তিনি এখন পলাতক। পলাতক আসামি উপস্থিত না থেকে চার্জের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেন না।’

এখন দেশে এসে এ মামলায় চার্জের বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারবেন না শফিক রেহমান। জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘এখন আর চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা যাবে না। সময় ও সুযোগ পার হয়ে গেছে। যখন এ মামলার শুনানি শুরু হবে তখন সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আমরা হেয়ারিংয়ে অংশ নেব।’

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে করা মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমান হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট। তিন মাস বা মামলায় পুলিশ প্রতিবেদন দেয়া পর্যন্ত এই জামিনের মেয়াদ নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। জামিন পাওয়ার পাঁচ দিন পর গাজীপুরের কাশিমপুরের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান শফিক রেহমান।

আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘মুক্তি পেয়ে দেশেই ছিলেন শফিক রেহমান। মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পর তিনি চলে যান ব্রিটেনে। তিনি ব্রিটিশ নাগরিক।’

এরপর থেকে সাড়ে চার বছরের বেশি সময় ধরে দেশে নেই এই প্রবীণ সাংবাদিক। ৮৪ বছর বয়সী শফিক রেহমান এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ। সবকিছু মিলে তিনি এখন ব্রিটেনেই বসবাস করছেন।

গ্রেপ্তারের পর তার স্ত্রী তালেয়া রেহমান সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রে শফিক রেহমান জড়িত ছিলেন না। জয় সম্পর্কে ‘আর্থিক তথ্য ফাঁসের গুজব’ কতটা সত্যি, সেটি অনুসন্ধান করতে কয়েক বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন। এর সঙ্গে জয়কে অপহরণ কিংবা হত্যার পরিকল্পনার কোনো সম্পর্ক ছিল না।’ অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র-সংক্রান্ত অভিযোগ মার্কিন আদালতে খারিজ হয়ে গেছে বলে দাবি করেন তালেয়া রেহমান।

তালেয়া রেহমান বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে নিবন্ধ লেখার জন্য শফিক রেহমান ২০১২ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। একই কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এফবিআইয়ের সাবেক এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

জয় সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এক নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ এফবিআই এজেন্ট রবার্ট লাস্টিককে ঘুষ দিয়েছিলেন। বিষয়টি ওই দেশের আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় রবার্ট লাস্টিকের সাজা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিএনপিঘনিষ্ঠ সম্পাদক শফিক রেহমানকে। ওই বাসায় তল্লাশি চালিয়ে জয়সংক্রান্ত কিছু তথ্য ও গোপনীয় নথিপত্র পাওয়া গেছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়। শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমানের দাবি, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিক’ হিসেবে নিবন্ধ লেখার জন্য তার স্বামী ওই তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।

২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল সকালে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডের বাসা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) শফিক রেহমানকে আটক করে নিয়ে যায়।

এর আগে জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনায় পুলিশ ২০১৫ সালের আগস্টে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরে তা মামলায় রূপান্তরিত হয়। সেই মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/এআইএম/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আ.লীগ অপকর্ম করতে চাইলে কোনোভাবেই ছাড় পাবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা সংকট চরমে
বাজারে ফলের দাম চড়া , সিন্ডিকেটকে দুষছেন বিক্রেতারা
জবি শিক্ষার্থীদের সনদ পেতে দপ্তরে-দপ্তরে ধরনা, অটোমেশনের দাবি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা