৯ বছর পর চোখের জলে মা-মেয়ের মহামিলন

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ১৮:২৯

নয় বছর আগে বাড়ি থেকে হারিয়ে যান রিনা বেগম। তারপর তাকে ফিরে পেতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন স্বজনরা। কোথাও পাওয়া যায়নি তাকে। রিনার দুই সন্তান। এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বৃদ্ধা মা জাহানারা বেগম। মাকে হারিয়ে নানুর আদরে যত্নে বড় হয় রিনার দুই সন্তান। তাদের আশা ছিল একদিন মাকে ফিরে পাবে। অবশেষে ৯ বছর পর রিনা বেগম ফিরেছেন তার মায়ের কাছে, সন্তানদের কাছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আখাউড়া সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে তিনি ফিরে আসেন। ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশের সহকারী কমিশনের কর্মকর্তারা তাকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন। রিনা বেগমকে গ্রহণ করতে সীমান্তে উপস্থিত ছিলেন তার মা জাহানারা বেগম ও রিনার দুই সন্তান।

দীর্ঘ দিন পর মাকে ফিরে পেয়ে সন্তানরা জড়িয়ে ধরলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত লোকজনের চোখ ছল ছল করে উঠে। মেয়ে শিফামনিকে দেখে হাসি ফুটে উঠে রিনা বেগমের মুখে। তিনি মেয়ের নাম ধরে ডেকে উঠেন।

এসময় ভারতে আটকে পড়া আরও ৫ বাংলাদেশি নারীপুরুষ দেশের মাটিতে পা রাখেন। ভারত ফেরত এসব লোকজন বিভিন্ন সময়ে মানব পাচারের শিকার হয়েছে বলে ধারনা করছে সংশ্লিষ্টরা।

ভারত ফেরত ছয় বাংলাদেশি হলো বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া উপজেলার জিয়ারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের হানিফা আক্তার, ময়মমসিংহের ফুলবাড়িয়ার আলপনা খাতুন, ঢাকার কেরানীগঞ্জের রীনা আক্তার, জামালপুরের মানিক মিয়া এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মো. শাহাজান মিয়া। এরা দুই বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ভারতে আটকা ছিলেন।

রিনা বেগমের মেয়ে শিফামনি। মাকে পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে। মাকে হারিয়ে খুব অসহায় লাগতো। সহপাঠীর মায়েরা স্কুলে আসতো। তখন আমার মায়ের কথা মনে পরে কান্না আসতো। অনেক কেঁদেছি। কিন্তু মা কীভাবে আগরতলায় গেল আমরা বুঝতে পারছি না।

ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ছয় বাংলাদেশিই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হতে আটক হয়। পরে আদালতের নির্দেশে আগরতলার মডার্ন সাইকিয়াটিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে তারা কিভাবে ভারতে এসেছে এ ব্যপারে আমাদেরকে কিছুই বলতে পারেনি।

জোবায়েদ বলেন, এদের অনেকেই এই হাসপাতালে চার থেকে পাঁচ বছর বা আরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাদের দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালে আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি চিকিৎসাধীন আছেন। পর্যায়ক্রমে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

এসময় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, এখানে অনেকের বাড়ি ভারতে ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে অনেক দূরে। ধারনা করছি এরা পাচারের শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশিদেরকে হস্তান্তরকালে ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, প্রথম সচিব রেজাউল হক চৌধুরী, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম, আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক সৈয়দ খায়রুল আলম, ইমিগ্রেশন পুলিশ ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :