ভাইরাল শুভারানী ও ভুবন বাদ্যকর এবং আজকের আধমরা তরুণসমাজ!

জি এম কিবরিয়া
 | প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৩৫

তারুণ্য প্রাণিকুলের স্বর্ণালি অধ্যায় আর মানবকুলের অহংকার! কিন্তু আজকের তরুণ কীভাবে সেই মূল্যবান সময় অতিক্রম করছে, তা-ই আজকের আলোচ্য বিষয়। সাধারণত ১৮-৩২ বছরকে তারুণ্যের মোক্ষম সময় বলা হয়। কবি সুকান্ত ১৮ বছর বয়স সম্পর্কে চমৎকার একটি কবিতায় লিখেছেন। কত সুন্দর সেই কবিতা!

"আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়

পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,

এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়-

আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।"

আমি নিশ্চিত আজকে অনেক তরুণ জানেনই না, এ রকম একটি কবিতা আছে?

কারণ কী? মোবাইল ফোন প্রযুক্তি?

না। প্রতিটি প্রযুক্তিরই ভালো এবং মন্দ দিক আছে! ছুরি দিয়ে যেমন সবজি কাটা যায়, তেমনি ডাকাতিও করা যায়! অন্যদিকে দেখুন, ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে, আর মাকড়শা শুষে নেয় বিষ! যার যা নেশা!

যখন রাতজাগা হতাশাগ্রস্ত তরুণ সংসারের বোঝা হয়ে, রোগাক্লান্ত বদনে, জীবন ও সমাজের প্রতি ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে মাঝেমধ্যে আমাদের কাছে আসে ১৫-২০ হাজার টাকার চাকরির সুপারিশের জন্য, তখন মায়া হয়; মায়া হয় তাদের মা-বাবার জন্য; আর বিরক্ত হই তার ওই আধমরা শ্রীহীন চেহারা দেখে!

প্রশ্ন করি, ‘তোমার হাতে তো দামি মোবাইল ফোন আছে! তো ই-কমার্স সম্পর্কে অভিজ্ঞতা আছে?’ ছেলেটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে!

অথচ বহু উদ্যোক্তা ই-কমার্স, আইটি, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ভিডিও এডিটর ও ইংরেজিতে দক্ষ কর্মী খুঁজে খুঁজে হয়রান! শেষে ভারত-শ্রীলঙ্কা থেকে উচ্চ বেতনে হায়ার করে হাঁপ ছেড়ে বেঁচে যান তিনি। অথচ আমাদের বেকারত্বের পরিসংখ্যান ধীরে ধীরে লম্বা থেকে লম্বা হচ্ছে! আমাদের আবার আছে বিসিএস নামক প্রাণশক্তি বিনাশকারী এক চাকরি প্রতিযোগিতা! যেখানে মাস্টার্সের পরেও বাঙালি তরুণ আবার ছয় বছরের বিসিএস মাস্টার্স করে!

আমার আলোচনার বিষয় ওই দিকে নয়! তাই ওই বিশেষ চাকরিপ্রার্থীকেই প্রশ্ন করি, ‘কীভাবে কেটেছে বিগত পাঁচ বছর? উত্তর আসে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ওমুক সাবজেক্টে পড়েছি। আবার প্রশ্ন করি, করোনাকালীন দুই বছর কী করেছো? উত্তর: কলেজ বন্ধ ছিল তো, তাই পড়াশোনা হয়নি!

পাঠক, আপনার কাছে এবার প্রশ্ন, ভেবে দেখুন, মানবজীবনের স্বর্ণালি অধ্যায়ের ১৪ বছরের মধ্যে ৫ বছরের কোনো হিসাব যে তরুণের কাছে নেই, সেই তরুণ কীভাবে নিজেকে, পরিবারকে বা দেশ-বিশ্বকে সমৃদ্ধ করবে?

এখানে পাল্টা প্রশ্ন আসতেই পারে, তারা কীভাবে সময় কাটাচ্ছে?

সহজ উত্তর- ওই যে ভাইরাল সংস্কৃতি! হ্যাঁ, তাদের ভাইরাল সংস্কৃতি পেয়ে বসেছে! ভাইরাল হবে বলে নানাবিধ ভাইরাল তারকা নিয়ে তারা ব্যস্ত! নানাবিধ অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, সস্তা ফানি ভিডিও নিয়ে মজে থাকা, মেতে ওঠা আজকের এই তরণকে কে চাকরি দেবে?

‘বাদাম বাদাম, আমার কাছে পাইবা তুমি কাঁচা বাদাম’! গানটিতে একজন সংগ্রামী মানুষের জীবনসংগ্রামের চিত্র ফুটে উঠেছে; ফুটে উঠেছে তার প্রতিভার স্বাক্ষর ও মার্কেটিং-এর অপূর্ব কৌশল। এখানে ভুবন বাবু কিন্তু ভাইরাল হতে এই গান করেননি! জীবিকার প্রয়োজনে করেছেন। আর যেসব তরুণ তার গানকে অনুষঙ্গ করে বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করে হাজার হাজার ভিডিও ছেড়েছেন, তারা নিজের অজান্তেই নিজের প্রতিভা বা সম্ভাবনাকে গলা টিপে হত্যা করে ফেলছেন, প্রতিরত!

আর এভাবেই অধঃপতিত হচ্ছে তারুণ্যের নিয়ামক শক্তি উদ্যমতা, মেধা কিংবা সৃজনশীলতা! একদিন দেখবেন, জাতি হিসেবে আমাদের এই মেধাহীন, এই অনুকরণ প্রবণতার কীভাবে মূল্য দিতে হয়!

অপরদিকে, শুভারানী, জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক তরুণী, যার সাফল্য ও জীবনসংগ্রামের কথা, তার মায়ের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা আমরা জেনেছি, ওই সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যণেই। খাড়া পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা কত যে কঠিন, তা শুভারানীদের প্রত্যক্ষ না করলে বোঝা যাবে না!

এই শুভাদের মতো হাজারও তরুণ প্রতিভা আমাদের মাঝে আছে, যাদের জীবনের গল্প সিনেমার গল্পকেও হার মানায়! আমরা চোখের জলে শুভারানীদের দোয়া ও আশীর্বাদ করি! মেধা, পরিশ্রম ও প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে তারা নিজ নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে দেশ, জাতি ও মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এই কামনা করি!

সবশেষে, হতাশাগ্রস্ত তরুণসমাজের কাছে দুটি প্রশ্ন রেখে যাই- ১. এমন মানবজনম আর কি হবে? ২. সময় গেলে সাধন কি হবে? সাইজীর এই মহান বাণী অন্তরে ধারণ করে এগিয়ে যাক তরুণসমাজ!

লেখক: ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন ফাউন্ডেশন ও গরিব ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :