মুরাদ হাসান কি দুবাই?

অডিও কেলেঙ্কারির পর প্রতিমন্ত্রী ও দলীয় পদ খোয়ানো পর দেশ ছেড়ে কানাডার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন ডা. মুরাদ হাসান। কিন্তু দেশটিতে ঢুকতে পারেননি তিনি। টরন্টোর পিয়ারসনস বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তিনি সবশেষ কোথায় অবস্থান করছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
কানাডার স্থানীয় একটি পত্রিকার তথ্যমতে, তাকে টরন্টোর পিয়ারসনস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আরব আমিরাতের একটি বিমানে তুলে দেয়া হয়।
সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, কানাডা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিমানে তুলে দেওয়ার পর তিনি আরব আমিরাতের দুবাই নামেন। সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন।
তবে বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার একটি ছবি পাওয়া গেলেও এরপর থেকে তার আর কোনো ছবি মেলেনি কোথাও।
একটি সূত্র বলছে, কানাডায় প্রবেশ করতে না পারলেও অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন মুরাদ হাসান।
ঢাকার কানাডীয় হাইকমিশনার গণমাধ্যমকে জানান, করোনাকালীন কানাডা ভ্রমণের যথাযথ অনুমোদনের কাগজপত্র না থাকায় দেশটিতে প্রবেশাধিকার পাননি মুরাদ। তাকে প্রবেশাধিকার দেওয়ার বিষয়ে একমাত্র এখতিয়ার দেশটির ইমিগ্রেশন ও বর্ডার এজেন্সির।
বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডীয় হাইকমিশনার বেনোই প্রেফনটেইন একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে জানান, মুরাদ হাসানের বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে করোনাকালীন ভ্রমণের বিষয়ে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আছে, যা দেশটিতে ভ্যালিড (বৈধ) ভিসা থাকা সব ভ্রমণকারীর জন্য প্রযোজ্য। তবে কোনো ব্যক্তির ভিসা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে দেশটির ইমিগ্রেশন ও বর্ডার এজেন্সি।
এর আগে কানাডা থেকে প্রকাশিত ‘নতুন দেশ’ নামের একটি বাংলা সংবাদমাধ্যমের খবর বলা হয়, বিমানবন্দরে নামার পর ডা. মুরাদকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর দেশটির প্রবেশের অনুমিত না দিয়ে মধ্যপ্রচ্যের একটি দেশের বিমানে তুলে দেওয়া হয়।
এর আগে মুরাদকে কানাডায় ঢুকতে দিতে আপত্তি জানিয়ে কানাডায় বসবাসকারী বহু বাংলাদেশির একটি চিঠি বিমানবন্দরে তাকে আটকানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলেও জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে অশালীন বক্তব্য, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনায় পড়েন ডা. মুরাদ। বিএনপির পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি করা হচ্ছিল।
এরই মধ্যে ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক অভিনেত্রীর সঙ্গে অডিও কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়, যেখানে ডা. মুরাদ তাকে হোটেল সোনারগাঁয়ে ডাকেন। যেতে না চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং ধর্ষণের হুমকি দেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এরপর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকেও বাদ দেওয়া হয় তাকে।
তুমুল সমালোচনা শুরুর পর গত সোমবার থেকে অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান মুরাদ হাসান। ওই দিন চট্টগ্রামের একটি পাঁচতারকা হোটেলে অবস্থান নেন তিনি। পরদিন ভোররাতে ঢাকায় ফিরে আসেন।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চুপিসারে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন তিনি।
রাত ১টা ২১ মিনিট নাগাদ সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ঢাকা থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৮৫৮৫ ফ্লাইটে করে দুবাই যান। সেখান থেকে তিনি কানাডার উদ্দেশে রওনা হন।
নতুন দেশের প্রতিবেদনে বলা হয়, এমিরেটসের ফ্লাইটে ডা. মুরাদ দেশটির স্থানীয় সময় ১টা ৩১ মিনিটে টরেন্টো পিয়ারসন্স আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। এ সময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান।
বিপুল সংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলে তাকে জানানো হয়। দীর্ঘসময় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুরাদ হাসানকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের বিমানে তুলে দেওয়া হয়।
দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার গণমাধ্যমে খবর ছাড়া ডা. মুরাদের বিষয় কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে করোনা মহামারির কারণে যেকোনো ভিসায় কানাডা ভ্রমণের আগে বিশেষ অনুমতি নেওয়ার নিয়ম চালু আছে দেশটিতে। যেখানে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্টসহ, বেশ কিছু অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। অডিও ও বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী চাপে থাকা মুরাদ হাসান স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশ থেকে করোনা পরীক্ষা করে যেতে পেরেছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
(ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/এসএস/এএ/বিইউ/মোআ)

মন্তব্য করুন