প্রাণের ভেজাল দুধ তৈরির অভিযোগে পাবনায় ৩ কর্মকর্তার জেল, ২৫০০ লিটার দুধ জব্দ

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় প্রাণ কোম্পানির হাব সেন্টার থেকে ২ হাজার ৫০০ লিটার ভেজাল দুধ জব্দ করেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় ভেজাল দুধ সংরক্ষণ ও সরবরাহের অভিযোগে প্রাণের তিন কর্মকর্তাকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এছাড়া ভেজাল দুধ তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পৃথক অভিযানে এক নারীসহ আরও ছয়জনকে আটক করেছে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া গ্রাম এবং ছাইকোলা চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান চালানো হয় বলে জানান চাটমোহরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী।
অভিযানে অংশ নেয় এনএসআই পাবনার সহকারী পরিচালক এবিএম লুৎফুল কবিরের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি দল, অতিরিক্ত নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক মো. আসলাম হোসেন এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রাণ কর্মকর্তারা হলেন— ফরিদপুরের শহিদুল সরকারের ছেলে শামসুল আলম (৩৬), সিরাজগঞ্জের জহির রায়হান (২৭) এবং পাবনার নাজমুল হোসাইন (৩৫)। তিনজনই প্রাণের হাব সেন্টারে দায়িত্বে ছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— সাইদুল ইসলাম (৪৫), খলিলুর রহমান (৬৫), লিটন হোসেন (১৯), নিজাম উদ্দিন (৫০), রুবেল হোসেন (২০) এবং মাজেদা খাতুন (৩৫)।
ইউএনও জানান, ভেজাল দুধ তৈরির সরঞ্জামসহ বেশ কিছু কেমিকেল, তেল ও দুধ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে রুবেল হোসেনকে আদালতে আত্মসমর্পণের শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়েছে; তার দায়িত্ব নিয়েছেন আইনজীবী বড় ভাই এরশাদ আলী।
বিকেলে ছাইকোলা চৌরাস্তা এলাকায় প্রাণের হাব সেন্টারে অভিযান চালিয়ে তেল ও ডিটারজেন্ট মেশানো দুধ পাওয়া যায়। এ সময় সংরক্ষিত প্রায় ২ হাজার ৫০০ লিটার দুধ জব্দ করে জনসমক্ষে ধ্বংস করা হয়।
এনএসআই কর্মকর্তা লুৎফুল কবির বলেন, “চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার শতাধিক বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে কেমিকেল মিশিয়ে দুধ তৈরি করে আসছিল একটি চক্র। মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও এসব দুধ বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।”
এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (পাবলিক রিলেশন) তৌহিদ জামান বলেন, “ঘটনাটি কেন ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরে কোম্পানির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, “তিন-চার মাস আগে আমরা কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে দুধ কেনা বন্ধ করে দিই। এরপর থেকেই ওই চক্র আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। আমরা মনে করছি, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা।”
ভোক্তাদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “দুধ প্রক্রিয়াজাতের আগে তিন ধাপে পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রামীণ সংগ্রহ কেন্দ্র, হাব সেন্টার ও কারখানায় একাধিকবার পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত না হলে দুধ গ্রহণ করা হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনা প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটেছে। বাজারে পাঠানোর আগেই এটি ধরা পড়েছে। আমাদের দুধ নিরাপদ—এ বিষয়ে ভোক্তারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।”
(ঢাকাটাইমস/২২ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন