মিশা-জায়েদ প্যানেল কি এবার চাপে আছে?

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৫৬| আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ২০:১২
অ- অ+

২০১৭-১৯ এবং ২০১৯-২১। এই দুই মেয়াদে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ক্ষমতা সামলেছেন মিশা সওদাগর (সভাপতি) ও জায়েদ খানরা (সাধারণ সম্পাদক)। প্রথম নির্বাচনে তাদের সঙ্গে ছিলেন চিত্রনায়িকা নূতন, পপি, পূর্ণিমা, রোজিনা, অঞ্জনা, নায়ক রিয়াজ, মামনুন ইমন, বাপ্পারাজ, নিরব হোসেন, সাইমন সাদিক, আলীরাজ এবং খল অভিনেতা ডন ও নানা শাহর মতো তারকারা। সেবার ওমর সানি (সভাপতি প্রার্থী) ও অমিত হাসান (সাধারণ সম্পাদক) প্যানেলকে তারা বড় ব্যবধানে হারিয়ে শিল্পী সমিতিতে বসেছিলেন।

এরপর গত নির্বাচনে মিশা-জায়েদরা বলতে গেলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের সমিতির ক্ষমতায় আসেন। কারণ, ওই নির্বাচনে তাদের বিপক্ষে ছিল না কোনো প্যানেল। একমাত্র প্রতিপক্ষ ছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। তিনি স্বতন্ত্র থেকে সভাপতি পদে লড়েছিলেন। কিন্তু টিকতে পারেননি। যদিও গতবারের নির্বাচনে মিশা-জায়েদদের সঙ্গে ছিলেন না ২০১৭-১৯ নির্বাচনের রিয়াজ, পপি ও পূর্ণিমার মতো তারকারা। তাতে ক্ষমতায় বসতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। কারণ রিয়াজ, পপি, পূর্ণিমাদের শূন্যস্থান পূরণ করেছিলেন রুবেল ও ডিপজল।

কিন্তু এবারের চিত্রটা বোধহয় একটু হলেও ভিন্ন। কারণ, এবার মিশা-জায়েদদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন একটি শক্তিশালী প্যানেল। যেটির সভাপতি পদে রয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো নন্দিত অভিনেতা। সাধারণ সম্পাদক পদে দাঁড়িয়েছেন নিপুণ আক্তারের মতো জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা। এছাড়া আছেন রিয়াজ, ফেরদৌস, ডিএ তায়েব, শাহনূর, নিরব হোসেন, মামনুন ইমন, সাইমন সাদিক, অমিত হাসান, শাকিল খান, নানা শাহ, আফজাল শরীফ, জেসমিন, কেয়া, পরীমনি ও গাঙ্গুয়ার মতো অভিনয়শিল্পীরা।

উল্লেখ্য যে, এদের মধ্যে নিরব, ইমন, সাইমন, নান শাহ, আফজাল শরীফ, কেয়া ও জেসমিনরা গতবার মিশা-জায়েদদের প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এবার তারা ভিড়েছেন কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলে। পাশাপাশি এবার মিশা-জায়েদদের বিরুদ্ধে শিল্পীদের রয়েছে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। এই কমিটি গত দুই মেয়াদে ১৮৪ জন শিল্পীর পূর্ণ সদস্যপদ কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। ওই সব শিল্পীদের করে রেখেছেন সহযোগী সদস্য। যার ফলে তারা এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারছেন না। সে সব শিল্পীরা রীতিমতো ক্ষীপ্ত মিশা-জায়েদদের প্রতি।

পূর্ণ সদস্যপদ হারানো শিল্পীরা গত দুই বছর দফায় দফায় আন্দোলন করেন এফডিসির ভেতরে এবং বাইরে। করেন মানববন্ধনও। সেখানে মিশা-জায়েদদের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। এছাড়া সে সময় তাদেরকে নিষিদ্ধ করার হুমকিও দিয়েছিল চলচ্চিত্রের কয়েকটি সংগঠন। সম্প্রতি আবার সদস্যপদ হারানো শিল্পীরা হাইকোর্টে আবেদন করেন এবারের নির্বাচন স্থগিত করার জন্য। যদিও হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া শিল্পীদের রুল প্রস্তুত হলে তা শুনবেন বলেও জানান আদালত।

এদিকে, দেড় বছর পর আড়াল ভেঙে বুধবার প্রকাশ্যে এসেছেন আলোচিত চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। তিনি মিশা-জায়েদ কমিটিকে ইঙ্গিত করে খুবই ভয়ংকর অভিযোগ করেছেন। দাবি করেছেন, তার মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন নায়িকাকেও নাকি সদস্যপদ বাতিলের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

কারও নাম না করে পপি বলেন, ‘বর্তমান শিল্পী সমিতির একটি মাত্র ব্যক্তির কারণে, তার পলিটিক্স, নোংরামি এবং অনেক রকম অপকর্মে অসহযোগিতার কারণে আমাকে বারবার অপমানিত হতে হয়েছে। আমার মতো রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমা, নিপুণদের ব্যবহার করে, আমাদের কাঁধে বন্দুক রেখে যে এই চেয়ারটিতে বসেছে, সে বিভিন্ন রকম অপকর্ম করার চেষ্টা করেছে, যাতে আমরা সায় দিইনি।’

নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করে পপি বলেন, ‘আমার মতো শিল্পী, যে তিন-তিন বার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, আমার মতো শিল্পীকেও সদস্যপদ বাতিলের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এত বছর কাজ করার পর এটা একটা শিল্পীর জন্য কতটুকু অপমানের, সেটা আমি বুঝতে পারি। আমার মতো যে ১৮৪ জন শিল্পী সদস্যপদ হারিয়েছেন, তারা হয়তো আমার কষ্টটা বুঝতে পারবেন। আমিও তাদের কষ্টটা বুঝতে পারি।’

পাশাপাশি এবারের নির্বাচনে কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলকে সমর্থন দিয়ে তাদেরকে জয়ী করতে সকল শিল্পীদের প্রতি আহ্বানও জানান পপি। এদিকে, মঙ্গলবার এফডিসিতে কাঞ্চন-নিপুণদের প্যানেলের পরিচিতি সভায় বক্তৃতাকালে মিশা-জায়েদদের নামে ফৌজদারি মামলা করার হুঁশিয়ারি দেন খ্যাতিমান অভিনেতা আলমগীর। তিনি এবার কাঞ্চণ-নিপুণদের প্যানেলের হয়ে কাজ করছেন। অভিনেতার অভিযোগ, মিশা-জায়েদরা তার স্বাক্ষর জাল করে সেটি দলীয় প্রার্থীদের দেখিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন, আলমগীর ভাই স্বাক্ষর করেছেন।

তবে শুধু পপি বা আলমগীরের মতো তারকা শিল্পীরাই নন, এবারের নির্বাচনে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ও খোরশেদ আলম খসরুর মত বেশ কয়েকজন নামি পরিচালক-প্রযোজকও কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলকে সমর্থন দিয়েছেন এবং তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। সব মিলিয়ে এফডিসির অন্দরে জোর আলোচনা, সঙ্গে প্রশ্ন, তবে কি এবারের নির্বাচনে চাপে রয়েছে মিশা-জায়েদ প্যানেল? এর জবাব অবশ্য মিলবে শুক্রবার রাতে। কারণ, এদিন সকাল থেকে এফডিসিতে ভোট, ফলাফল রাতে।

দেড় শতাধিক শিল্পী ভোটাধিকার হারানোর ফলে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪২৮ জন। দুই প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলে মোট প্রার্থী ৪৪ জন। এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অভিনেতা পীরজাদা হারুন। আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের ভূমিকায় দেখা যাবে খ্যাতিমান পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানকে। এবার লড়াইটা হবে জমজমাট। নির্বাচনকে সামনে রেখে এমনটাই মত চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের।

ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/এএইচ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে ট্রল, দিনাজপুরের এএসপি প্রত্যাহার
‘গোপালগঞ্জে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি’
“চাঁদাবাজ যতই প্রভাবশালী হোক, পার পাবে না”
গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা