বিদ্যার দেবী মা সরস্বতী

সুব্রত বিশ্বাস (শ্রভ্র)
  প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:৩৭
অ- অ+

সরস্বতী হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার দেবী। সরস্বতী দেবীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে সরস্বতী পুজো উৎসব আকারে পালিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সোনারতরী কাব্যগ্রন্থের `পুরস্কার` কবিতায় আবেগঘনভাবে সরস্বতীর বন্দনা করেছেন। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজন করা হয়। তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে সরস্বতী পূজা বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে পালিত হয়। শ্রীপঞ্চমীর দিন অতি প্রত্যুষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। ধর্মপ্রাণ হিন্দু পরিবারে এই দিন শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃত্বর্পণের প্রথাও প্রচলিত। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপ গুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়।

সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। বেদে সরস্বতী প্রধানত নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সরস শব্দের অর্থ জল। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হলো জলবতী অর্থাৎ নদী। বৃহস্পতি হচ্ছে জ্ঞানের দেবতা, বৃহস্পতি পত্মী সরস্বতীও জ্ঞানের দেবী হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সরস্বতী কেবল জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবীতে পর্যবশিত হলেন। পণ্ডিতরা অনেকেই মনে করেন যে সরস্বতী প্রথমে নদী, পরে দেবী হয়েছেন। প্রতিমাকল্পে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভূষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। দেবীর বাহন রাজহাঁস। হংস জল ও দুগ্ধের পার্থক্য করতে পারে। জল ও দুধের মিশ্রণ থেকে হাঁস কেবল দুগ্ধ ও ক্ষীরটুকুই গ্রহণ করে। জ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রেও তাই।হাঁস জলে বিচরণ করে কিন্তু তার দেহে জল লাগে না।মহাবিদ্যার বেলাও একই কথা। ক্ষীরটুকু বয়ে যায় অনুশীলনকারীর মধ্যে। তবে প্রাচীন কালে তান্ত্রিক সাধকেরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন বলে জানা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির ওপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করা হতো। শ্রীপঞ্চমী তিথিতে ছাত্রেরা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত প্রন্থ, শ্লেট, দোয়াত ও কলমে সরস্বতী পূজা করত। গ্রামাঞ্চলে এই প্রথা বিংশ শতাব্দীতেও প্রচলিত ছিল। শহরে ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই সরস্বতীর প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করতেন। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এই পূজার বিসর্জন দেখতে আসত। আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে।

শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা হয়। সরস্বতীর পূজা সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই করা হয়। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। যেমন: অভ্র-আবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিষ। পূজার জন্য বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলও প্রয়োজন হয়। লোকাচার অনুসারে, ছাত্রছাত্রীরা পূজার পূর্বে কুল খাওয়া নিষেধ। পূজার দিন পড়া লেখাও ছাত্রছাত্রীদের করা লাগবে না বলে প্রচলিত আছে। যথাবিহিত পূজার পর লক্ষ্মী, নারায়ণ, দোয়াত-কলম, পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করা হয়। এই দিন ছোটোদের হাতেখড়ি দিয়ে পাঠ্যজীবন শুরু হয়। পূজান্তে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার প্রথাটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের দল বেঁধে অঞ্জলি দিতে দেখা যায়। পূজার পরদিন পুনরায় পূজার পর চিড়ে ও দই মিশ্রিত করে দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করা হয়। এরপর পূজা সমাপ্ত হয়।সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

লেখক: সমন্বয়ক, মিডিয়া সেল টু ভিসি এবং কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্বদ্যিালয়।

(ঢাকাটাইমস/০৪ফেব্রুয়ারি/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করলে ভালো হতো: জামায়াত আমির
জামালপুরে মাদ্রাসায় ছাত্রী ভর্তিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে ডিএনসিসির কর বকেয়া ৩০ কোটি টাকা
শহীদ নিজামীর খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ: রফিকুল ইসলাম 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা