পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ বাড়াতে ৬১ ব্যাংককে বিএসইসির চিঠি

দেশের পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট নিরসনে বিনিয়োগ বাড়াতে ৬১টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বরাবর চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চিঠিতে ৩৩টি ব্যাংককে মূলধনের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ ও ২৮টি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে বিএসইসি।
বুধবার বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আলাদা আলাদা চিঠি ৬১টি ব্যাংককে পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংকগুলোকে পাঠানো চিঠিতে বিএসইসি বলেছে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার মূলত ব্যক্তি বিনিয়োগনির্ভর। এ বাজারের ৮০ শতাংশ বিনিয়োগ আসে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের থেকে। শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার স্বার্থে লেনদেনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।
ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির উদ্যোগকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএসইসি বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিটি ব্যাংককে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। এ বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানি আইনে বর্ণিত ব্যাংকগুলোর নিয়মিত বিনিয়োগ এক্সপোজারের অংশ হবে না।
বিএসইসির চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সব ব্যাংক মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে। যদিও অনেক ব্যাংকের বর্তমান বিনিয়োগ এক্সপোজার এর সর্বোচ্চ সীমার অনেক নিচে অবস্থান করছে।
এ ব্যাপারে বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, কার্যক্রমে থাকা ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৩টি ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া ২০০ কোটি টাকার বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল গঠন করেছে। এখনও তহবিল গঠন করেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ২৮টি। এরমধ্যে যে ৩৩টি ব্যাংক তহবিল গঠন করেছে সেগুলো যথেষ্ট না। এ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়িয়ে এ বাজারের উন্নয়নে সহযোগিতা করার জন্য ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার আগে কার কত বিনিয়োগ রয়েছে, সে তথ্য সংগ্রহ করে বিএসইসি। এর মধ্যে গত ৯ মার্চ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিনিয়োগের আহ্বান জানায় সংস্থাটি। বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে বর্তমানের তুলনায় অন্তত ২ শতাংশ এক্সপোজার বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়। যেসব ব্যাংক এ শর্ত মানবে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশিত টায়ার-১ এবং টায়ার-২ মূলধন পর্যাপ্ততা নিশ্চিতে বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব 'সুপার ফার্স্ট ট্র্যাক'-এ অর্থাৎ খুবই দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসইসি।
২০০ কোটির বিশেষ তহবিল গঠন করতে যে ব্যাংকগুলো চিঠি দেয়া হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ব্যাংক আল-ফালাহ, সিটি ব্যাংক এন.এ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলন, হাবিব ব্যাংক, এইচএসবিসি, ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।
মূলধনের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ যে ব্যাংকগুলোকে বলা হলো- এবি ব্যাংক, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক, দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, মিডল্যান্ড ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক লিমিটেড, মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড এবং জনতা ব্যাংক লিমিটেড।
(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/বিএস/ইএস)

মন্তব্য করুন